তথ্য প্রুযুক্তি ডেস্ক:
বিশ্বব্যাপী মাইক্রোসফটের ক্লাউড সেবা অ্যাজুরে প্রযুক্তিগত বিভ্রাটের কারণে বুধবার রাত পর্যন্ত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট অচল হয়ে পড়ে। হিথ্রো বিমানবন্দর, ন্যাটওয়েস্ট ব্যাংক, মাইনক্রাফটসহ অসংখ্য জনপ্রিয় ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে ব্যবহারকারীরা সমস্যার সম্মুখীন হন।
মাইক্রোসফট জানায়, বুধবার বিকেল ৪টার দিকে অ্যাজুরের সার্ভিসে “ডিএনএস সমস্যা” শনাক্ত হয়। এই প্রযুক্তিগত ত্রুটির প্রভাবে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ওয়েবসাইটগুলো ধীরে ধীরে অচল হয়ে পড়ে। ডাউনডিটেক্টরের তথ্য অনুযায়ী, কয়েক ঘণ্টা ধরে হাজার হাজার ব্যবহারকারী ওয়েবসাইটে প্রবেশে সমস্যা অনুভব করেন।
এছাড়া, মাইক্রোসফট ৩৬৫ ব্যবহারকারীরাও বেশ কিছু সার্ভিসে বিলম্ব এবং সংযোগের ত্রুটির সম্মুখীন হন। এ সময়ে আউটলুকসহ বিভিন্ন সেবা ব্যবহারে সমস্যা সৃষ্টি হয়। কিছু ব্যবহারকারী জানান, মাইক্রোসফটের সার্ভিস স্ট্যাটাস পেজে প্রবেশ করা যাচ্ছিল না, ফলে তারা এক্সে ত্রুটির ব্যাপারে আপডেট প্রকাশ করেন। কিছু ওয়েবপেজে “Uh oh! Something went wrong with the previous request.” বার্তা প্রদর্শিত হয়।
বিভ্রাটের ফলে স্কটিশ পার্লামেন্টের অনলাইন ভোটিং সিস্টেমও অচল হয়ে যায়, যার কারণে ভূমি সংস্কার আইন নিয়ে নির্ধারিত বিতর্ক স্থগিত করতে হয়। পার্লামেন্ট সূত্র জানায়, এটি মাইক্রোসফটের বিভ্রাটের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল।
ব্রিটেনের হিথ্রো বিমানবন্দর, ন্যাটওয়েস্ট ব্যাংক, আসদা, এমঅ্যান্ডএস, মোবাইল অপারেটর ওটু এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্টারবাকস ও ক্রোগারসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানও এই বিভ্রাটের প্রভাবে আক্রান্ত হয়। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে না পারার কারণে কার্যক্রমে অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিশেষজ্ঞ লিসা ওয়েব জানান, “যারা পেমেন্টের ক্ষেত্রে সমস্যা বা বিলম্বের সম্মুখীন হয়েছেন, তারা অবশ্যই প্রমাণ রেখে দিন। যদি প্রয়োজন পড়ে, তারা ক্ষতিপূরণের দাবি করতে পারবেন।”
বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, মাইক্রোসফটের অ্যাজুর এখন বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ ক্লাউড মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করছে, যা পুরো ইন্টারনেটকেই একক প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরশীল করে তুলছে। এর ফলে, প্রযুক্তিগত বিভ্রাটের পরিণতি ব্যাপক হয়ে উঠছে।
রয়্যাল হলোওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. সাকিব কাকভি মন্তব্য করেন, “অর্থনৈতিক কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট, অ্যামাজন বা গুগলের মতো বৃহত্তর ক্লাউড সেবায় নির্ভরশীল। এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান তৈরি করে, কারণ একটি কোম্পানির প্রযুক্তিগত সমস্যা পুরো সিস্টেমের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বড় ধরনের সমস্যা হলে একটির বিপদে শত শত সিস্টেম একযোগে অচল হয়ে পড়ে।”
মাইক্রোসফট জানায়, তারা সমস্যা সমাধান করেছে এবং বেশিরভাগ ওয়েবসাইট এখন পুনরায় চালু হয়েছে। তবে, এই ধরনের বিভ্রাট ভবিষ্যতে আরও বড় প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে যখন বিশ্বজুড়ে ক্লাউড সেবার ওপর এত বেশি নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছে। কোম্পানিগুলোকে তাদের প্রযুক্তি অবকাঠামো আরও শক্তিশালী করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন বিভ্রাটের ঝুঁকি কমানো যায়।