জাতীয় ডেস্ক
গাজীপুর, ৫ নভেম্বর ২০২৫: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, দেশের জনগণ এখন নির্বাচনমুখী এবং নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের হুমকি বা শঙ্কা নেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। নির্বাচনের সুষ্ঠু আয়োজন নিশ্চিত করতে প্রশাসন সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বুধবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভাওয়াল সম্মেলন কক্ষে প্রশাসন, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসনের প্রস্তুতি ও করণীয় বিষয় নিয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। গাজীপুরের স্থানীয় সমস্যা, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে সভায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বিভিন্ন সময় নির্বাচনকে ঘিরে গুজব ছড়ানো হয়। সাংবাদিকরা সত্য প্রকাশ করায় এসব গুজব অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। সত্য ও নির্ভুল সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে গণমাধ্যম দেশবাসীকে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করছে।”
দুর্নীতি ও মাদককে দেশের সবচেয়ে বড় সামাজিক সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, “দুর্নীতি ও মাদক সমাজের শেকড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। এগুলো দূর করতে প্রশাসনের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা অপরিহার্য। মাদক নির্মূলে জনগণের সহযোগিতা ছাড়া এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।”
তিনি আরও জানান, গাজীপুর একটি শিল্পাঞ্চল হওয়ায় এখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ জীবিকার সন্ধানে আসে। এই বহুমাত্রিক জনসংখ্যার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা প্রশাসনের অন্যতম অগ্রাধিকার। তিনি বলেন, “শিল্প এলাকায় ঝুট ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজদের কারণে মাঝে মাঝে সমস্যা দেখা দেয়। এসব নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে।”
পুলিশ সংকট প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “গাজীপুরে বর্তমানে জনবল ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি পূরণে ইতোমধ্যে সাড়ে ছয়শত অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের সময় আরও বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হবে।”
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জামিনে মুক্তির প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “জামিন আদালতের এখতিয়ার। কেউ জামিনে থেকে অপরাধ করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আদালত সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করছে।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কার্যক্রম চালানো একটি নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের বিষয়ে তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল ভূমিকার কারণে ওই দলের কার্যক্রম অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে যে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়, গণমাধ্যমের সত্য প্রতিবেদনই তার কার্যকর প্রতিরোধ।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, “নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোরও দায়িত্ব রয়েছে। সবাই দায়িত্বশীলভাবে কাজ করলে নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকবে।”
তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা যদি সত্য তথ্য জনগণের সামনে উপস্থাপন করেন, তাহলে দেশের জনগণ বুঝতে পারবে কোনটি গুজব আর কোনটি বাস্তবতা।”
সভার আগে ও পরে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ব্রিফ করেন। প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।