আইন আদালত ডেস্ক
চব্বিশের জুলাই গণহত্যার দায়ে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে সোমবার (১৭ নভেম্বর)। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর এ রায় সরাসরি সম্প্রচার করা হবে, পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বড় পর্দায় জনগণ এ বিচারকাজ দেখতে পারবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি সূত্র জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দেশ ও বিশ্বের নজর এ রায়ে থাকবে। সম্প্রচার ব্যবস্থা এবং প্রধান স্থানগুলোতে বড় পর্দা বসিয়ে বিচার কার্যক্রম সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় ঘোষণার জন্য ১৭ নভেম্বর নির্ধারণ করেছেন। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম ও ফারুক আহাম্মদ।
মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ২৩ অক্টোবর সমাপনী বক্তব্য দেন। তিনি বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ নেতাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচারপ্রক্রিয়ার উদাহরণ তুলে ধরেন এবং শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেন। এরপর স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী যুক্তি উপস্থাপন করেন, যা প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে পুনরায় প্রতিউত্তর করা হয়। রায়ের তারিখ ঘোষণার জন্য ট্রাইব্যুনাল দিন ধার্য করেছেন এবং আশা করা হচ্ছে সপ্তাহখানেকের মধ্যে রায় ঘোষিত হবে।
মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। এজন্য প্রসিকিউশন তার বিষয়ে চরম দণ্ড দাবি না করে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। মামুনের আইনজীবী তার খালাস চেয়েছেন।
শেখ হাসিনার এ মামলায় ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় চলতি বছরের ৩ আগস্ট এবং প্রধান সাক্ষীদের মধ্যে প্রথম ছিলেন খোকন চন্দ্র বর্মণ। ৮ অক্টোবর শেষ হয় মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরের জেরার মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণের ধাপ। এরপর প্রসিকিউশন ও স্টেট ডিফেন্স আইনজীবীর যুক্তিতর্ক শেষ হয় ২৩ অক্টোবর।
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি মূল মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা ও আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো। আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রের দৈর্ঘ্য ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠা, যার মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠা, শহীদদের তালিকা দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা।
মামলার তদন্ত সংস্থা ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। রায় ঘোষণার মাধ্যমে জুলাই গণহত্যার প্রথম কোনো বিচারপ্রক্রিয়ার সিদ্ধান্ত জাতির সামনে উপস্থাপিত হবে।