আবহাওয়া ডেস্ক
শনিবার (২২ নভেম্বর) সকাল ৯টা ১০ মিনিটের হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান শহরগুলোর বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (আইকিউএয়ার) অনুসারে ভারতের রাজধানী দিল্লির বায়ু বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। একই সময়ে ঢাকার বায়ু অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
দিল্লিতে বায়ুর মানের স্কোর ৪৪১, যা নির্দেশ করে যে নাগরিকদের জন্য বাতাসের মান অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং স্বাস্থ্যহানিকর। এ ধরনের অবস্থায় শিশু, বয়স্ক এবং দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ ঝুঁকি থাকে। এর পাশাপাশি, সাধারণ মানুষও দীর্ঘসময় বাইরে থাকলে শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালা, গলা ব্যথা এবং দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুস সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
দ্বিতীয় অবস্থানে পাকিস্তানের করাচি রয়েছে, যেখানে দূষণ স্কোর ২৩৬। এটি নির্দেশ করে যে শহরের বাতাস অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য সতর্কতা এবং সম্ভাব্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন। একই রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বায়ুর মানের সূচকে ১৮৮ স্কোর পেয়েছে, যা “অস্বাস্থ্যকর” হিসেবে চিহ্নিত। এই অবস্থায় দীর্ঘ সময় বাইরে থাকার ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণ শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, চোখের জ্বালা এবং ফুসফুসে প্রভাবের মুখোমুখি হতে পারে।
বায়ু মানের সূচক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, স্কোর ০ থেকে ৫০ পর্যন্ত হলে বায়ুর মান ভালো, ৫১ থেকে ১০০ পর্যন্ত হলে মাঝারি বা সহনীয়, ১০১ থেকে ১৫০ হলে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর, ১৫১ থেকে ২০০ হলে সাধারণ জনগণের জন্য অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ হলে খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা বিপজ্জনক বা দুর্যোগপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের উচ্চ মাত্রার বায়ুদূষণ মূলত যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া, শিল্পকলা থেকে নির্গত দূষণ, নির্মাণকাজের ধূলিকণা এবং প্রাকৃতিক পরিস্থিতির কারণে ঘটে থাকে। ঢাকা শহরের অস্বাস্থ্যকর বায়ুর ক্ষেত্রে যানজট এবং পুরনো অবকাঠামোর অবদান গুরুত্বপূর্ণ। শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ ভবনের অনুমোদন না থাকা এবং পরিকল্পনাহীন নগরায়নও দূষণ নিয়ন্ত্রণে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
বায়ুদূষণের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের মধ্যে শ্বাসনালি রোগ, হাঁপানি, হৃৎপিণ্ড সংক্রান্ত সমস্যা, চোখের রোগ এবং শিশুদের মধ্যে ফুসফুসের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা অন্যতম। এ কারণে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নাগরিকদের জন্য অতি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন, বাড়ির ভেতরে ফিল্টারযুক্ত হাওয়া গ্রহণ, বাইরে বের হওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার, এবং দূষণপূর্ণ এলাকায় দীর্ঘসময় অবস্থান এড়িয়ে চলা।
সরকারি এবং অপ্রকারশিল্প উদ্যোগগুলোকে আরও কার্যকর করতে হবে, যেমন: যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, সবুজায়ন বৃদ্ধি, শিল্প ও নির্মাণ খাতে দূষণ নিয়ন্ত্রণের কড়াকড়ি প্রণয়ন এবং বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন। নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দূষণ রোধে স্থায়ী নীতি গ্রহণ ছাড়া এই ধরনের উচ্চ মাত্রার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
ঢাকার এই অস্বাস্থ্যকর বায়ু পরিস্থিতি এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য শহরের বিপজ্জনক বায়ু মান নির্দেশ করছে যে, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট প্রভাবের কারণে শ্বাসনালি এবং পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যা বাড়ছে। ফলে, ব্যক্তিগত ও সরকারি উদ্যোগের সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো কঠিন হয়ে উঠছে।