শিক্ষা ডেস্ক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূমিকম্প–পরবর্তী পরিস্থিতি মূল্যায়নের কারণে চলতি মাসের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে একাডেমিক কার্যক্রমে বড় ধরনের বিঘ্ন এড়াতে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইন ক্লাস চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির বৈঠক শেষে জনসংযোগ দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ডিনস কমিটির সভায় ভূমিকম্পের পর বিভিন্ন আবাসিক হল ও একাডেমিক ভবনের কারিগরি নিরীক্ষা, মূল্যায়ন এবং সামগ্রিক অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। এই মূল্যায়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর ও বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত সাব-কমিটির পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশের ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়। ভবনগুলোর গাঠনিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রমের সময় নির্ধারণই ছিল সভার আলোচনার মূল বিষয়।
সভায় জানানো হয়, বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ পর্যালোচনার পর পূর্বঘোষিত শীতকালীন ছুটি অপরিবর্তিত রাখা হবে। পাশাপাশি ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বরকে অতিরিক্ত ছুটি হিসেবে শীতকালীন ছুটির সঙ্গে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে দীর্ঘ ছুটিকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভবনসমূহে প্রয়োজনীয় কারিগরি কাজ সম্পন্ন করার সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে প্রশাসন আশা করছে।
এ ছাড়া, ২৮ ডিসেম্বর থেকে আবাসিক হল খোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ওই দিন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শ্রেণিকাজও শুরু হবে বলে জানানো হয়। প্রশাসন স্পষ্ট করেছে যে ছুটির সময় কোনো ধরনের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। তবে জরুরি একাডেমিক প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের শিক্ষণ ঘাটতি কমিয়ে আনতে অনলাইন ক্লাস ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করছে, অনলাইন পাঠদানের মাধ্যমে চলমান সেমিস্টারগুলোর নির্ধারিত পাঠ পরিকল্পনা আংশিকভাবে হলেও বজায় রাখা সম্ভব হবে।
ডিনস কমিটির সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয় যে আগামী জানুয়ারি ২০২৬-এর প্রথম সপ্তাহ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল স্থগিত পরীক্ষা পুনরায় শুরু করা হবে। সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিনদের সঙ্গে আলোচনা ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের সমন্বয়ের ভিত্তিতে প্রতিটি বিভাগ নতুন পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণ করবে। এই পুনঃসূচিকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন অনুষদ ও ইনস্টিটিউটের পরীক্ষার সামঞ্জস্য বজায় রাখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের একাডেমিক অগ্রগতিও নতুনভাবে নির্ধারিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। আবাসিক হল ও একাডেমিক ভবনগুলোর গাঠনিক সক্ষমতা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কার্যক্রম সীমিত রাখা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। বিশেষজ্ঞদের দেওয়া সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংস্কার ও মেরামত কার্যক্রম ধাপে ধাপে সম্পন্ন করা হবে। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, ছুটিকালীন সময় ব্যবহার করে জরুরি সংস্কার কাজের একটি বড় অংশ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, গত ২২ নভেম্বর ভূমিকম্পজনিত ঝুঁকির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুই সপ্তাহের জন্য সব একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের ২৩ নভেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে আবাসিক হল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আকস্মিক এই সিদ্ধান্তের ফলে বহু শিক্ষার্থীকে স্বল্প সময়ে হল ত্যাগ করতে হয় এবং চলমান শ্রেণিকাজ ও পরীক্ষাসূচি স্থগিত হয়ে যায়। অতিরিক্ত ঝুঁকি এড়াতে প্রশাসনের এই পদক্ষেপের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডারে সাময়িক পরিবর্তন আনা হলেও পরবর্তীতে অনলাইন ক্লাস চালু করায় শিক্ষার্থীরা পাঠক্রমে যুক্ত থাকার সুযোগ পায়।
সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে পুনরায় ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক একাডেমিক পরিবেশ ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ভবনগুলোর নিরাপত্তা জোরদার, শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত করা এবং দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসকে নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবে বলে জানা গেছে।