জাতীয় ডেস্ক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রবাসী ভোটারদের জন্য চালু করা ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে ২ লাখ ৯২ হাজার ১৯০ জন প্রবাসী ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। বুধবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে, নিবন্ধনকারীদের মধ্যে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৪৩৯ জন পুরুষ এবং ২২ হাজার ৭৫১ জন নারী। নির্ধারিত সময়ে সংশ্লিষ্ট প্রবাসীদের ঠিকানায় ডাকযোগে ব্যালট পেপার পাঠাবে নির্বাচন কমিশন, যা পূরণ করে পুনরায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠানোর মাধ্যমে ভোট প্রদান সম্পন্ন হবে।

নির্বাচন কমিশন প্রথমবারের মতো আইটি-সমর্থিত পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতির মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত ভোটারদের ভোটদানের সুযোগ করে দিয়েছে। এ ব্যবস্থায় প্রবাসী, আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তি এবং নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা অংশ নিতে পারবেন। ভোট দিতে হলে অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। গত ১৯ নভেম্বর শুরু হওয়া এই নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে আগামী ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রবাসীদের ভোট প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে কমিশন এ উদ্যোগকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

নিবন্ধন যেসব দেশে চলছে তার পরিসরও বিস্তৃত। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, মিসর, মোজাম্বিক, লিবিয়া, মরিশাস, হংকং, ব্রাজিল, উগান্ডা, কঙ্গো, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, লাইবেরিয়া, বতসোয়ানা, কেনিয়া, রুয়ান্ডা, আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, তানজানিয়া, সোমালিয়া, ঘানা, গিনি, মরক্কো, দক্ষিণ সুদান, চিলি, সিয়েরা লিওন, ইকুয়েডর, তাইওয়ান, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, গাম্বিয়া, পেরু, জিম্বাবুয়ে, যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশিরা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করছেন। বিস্তৃত এই ভৌগোলিক পরিসর দেখাচ্ছে যে প্রবাসীদের ভোটাধিকার বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশনের প্রচেষ্টা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে রয়েছে।

ইসি জানিয়েছে, নিবন্ধনকারী প্রত্যেক ভোটার ডাক বিভাগের মাধ্যমে তাদের ঠিকানায় ব্যালট পেপার পাবেন। ব্যালট পূরণের পর নির্দিষ্ট ফিরতি খামে তা সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে হবে। ডাক-ভিত্তিক এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা এবং নির্দেশনা অনুসরণ করা জরুরি হবে। কমিশন পরিকল্পনা করেছে, নিবন্ধন শেষে ব্যালট দ্রুত পাঠিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোট অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার।

আইটি-সমর্থিত পোস্টাল ভোট ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন প্রথমবারের মতো প্রবাসী নাগরিকদের সরাসরি জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিচ্ছে, যা দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। দেশে বসবাস না করলেও, বাংলাদেশি নাগরিকত্ব বহাল রেখে বিদেশে থাকা বিপুলসংখ্যক প্রবাসীর ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ এ উদ্যোগে বাস্তবে রূপ পাচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৫০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার যোগ্য বলে ধারণা করছে কমিশন, এবং এই পুরো প্রবাসী জনগোষ্ঠীকে ভোট প্রক্রিয়ায় আনতেই কমিশন ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশ-বিদেশে অবস্থানরত ভোটারদের তালিকা হালনাগাদ, প্রযুক্তিগত সহায়তা বৃদ্ধি এবং লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা জোরদার করা হচ্ছে। প্রবাসী ভোট সংযুক্ত হওয়ায় ব্যালট ব্যবস্থাপনা, ডাকযোগে প্রেরণ ও সংগ্রহ, এবং যাচাই প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করতে কমিশনকে অধিকতর সমন্বিত প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা একটি বড় জনগোষ্ঠীকে ভোট প্রদানের সুযোগ দেওয়ায় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তির মাত্রা বাড়বে বলে প্রশাসনিক মহল মনে করছে। পাশাপাশি ডাকযোগে ব্যালট ব্যবস্থায় সময় ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ অবকাঠামো, এবং দেশভেদে ডাক নিরাপত্তার বিষয়গুলো চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে আসতে পারে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে স্থায়ী মিশন ও দূতাবাসের সঙ্গে সমন্বয় করে ইসি কাজ করছে।

প্রবাসী ভোট অন্তর্ভুক্তির এই উদ্যোগ বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের পরিধিকে আরও বিস্তৃত করছে। নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলমান থাকায় সংখ্যাটি আরো বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রবাসীদের আগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে, যাতে যোগ্য ভোটাররা সময়সীমার মধ্যে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারেন।