জাতীয় ডেস্ক

বাংলাদেশ পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ রদবদলে ৩০ জন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি), ৪ জন অতিরিক্ত ডিআইজি এবং ৫ জন পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে বদলি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার জারি করা দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ বদলির সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়, যা শুক্রবার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ-১ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনগুলিতে উল্লেখ করা হয়, বিশেষ প্রয়োজন ও প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের অংশ হিসেবে এসব বদলি কার্যকর করা হয়েছে। বদলিকৃত ৩০ জন কর্মকর্তা সম্প্রতি অতিরিক্ত ডিআইজি পদ থেকে ডিআইজি পদে উন্নীত হন। পদোন্নতির পর মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন ইউনিট, আঞ্চলিক পুলিশ কার্যালয়, স্পেশালাইজড উইং এবং প্রশাসনিক দপ্তরে তাদের নতুনভাবে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, বদলিকৃত কর্মকর্তাদের নতুন কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং বর্তমান পদ ত্যাগ করার সময়সীমাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বদলির আদেশ জারির সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে আনুষ্ঠানিক নোটিফিকেশন পাঠানো হয়, যাতে প্রশাসনিক কার্যক্রম বিঘ্নিত না হয় এবং দায়িত্ব হস্তান্তর যথাসময়ে সম্পন্ন হয়।

বাংলাদেশ পুলিশে ডিআইজি পদটি গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের অবস্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন আঞ্চলিক রেঞ্জ পরিচালনা, বিশেষায়িত ইউনিটের কার্যক্রম তদারকি এবং নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় সহায়তা করা এ পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের প্রধান দায়িত্ব। নতুন করে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের বদলির ফলে বিভিন্ন রেঞ্জ ও ইউনিটে নেতৃত্বের পুনর্বিন্যাস ঘটবে, যা প্রশাসনিক প্রক্রিয়া আরও গতিশীল করার লক্ষ্যেই করা হয়েছে বলে জানা যায়।

একই প্রজ্ঞাপনে চারজন অতিরিক্ত ডিআইজিকেও বদলির আওতায় আনা হয়েছে। এরা সাধারণত বিশেষায়িত ইউনিট, সদর দফতর বা প্রশিক্ষণ ও কারিগরি শাখায় দায়িত্ব পালন করে থাকেন। বদলির মাধ্যমে তাদের কিছু জনকে মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বে এবং কিছু জনকে কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক কাজে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য রক্ষা ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এসব দায়িত্ব পুনর্বণ্টন গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রশাসনিক সূত্র জানায়।

এ ছাড়া পাঁচজন পুলিশ সুপারকেও নতুন কর্মস্থলে বদলি করা হয়েছে। এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তারা জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, গোয়েন্দা কার্যক্রমের সমন্বয়, থানাসমূহের কার্যক্রম তদারকি এবং স্থানীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে থাকেন। তাই তাদের বদলির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জেলার আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও কার্যক্রমগত পরিবর্তন আসতে পারে।

পুলিশ প্রশাসনে এ ধরনের রদবদল সাধারণত বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা, নতুন নীতি বাস্তবায়ন, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপযুক্ত স্থানে নিয়োগ এবং মাঠপর্যায়ের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে হয়ে থাকে। বিশেষভাবে পদোন্নতির পর কর্মকর্তা বদলি একটি নিয়মিত প্রশাসনিক প্রক্রিয়া, যাতে প্রত্যেক কর্মকর্তার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে দায়িত্ব বণ্টন করা যায়। এর ফলে বিভিন্ন ইউনিটে নেতৃত্বের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং নতুন কর্মকর্তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পান।

প্রশাসনিক মহল মনে করছে, সদ্য প্রকাশিত এ বৃহৎ পরিসরের বদলির ফলে দেশের বিভিন্ন রেঞ্জ, স্পেশাল শাখা এবং জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিচালনায় নতুন কর্মপরিকল্পনা ও লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথ সুগম হবে। একই সঙ্গে কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত দক্ষতা ও বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ অনুযায়ী দায়িত্ব বণ্টন হওয়ায় সার্বিক কর্মদক্ষতার উন্নয়ন প্রত্যাশিত।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বদলির নির্দেশ বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে সংশ্লিষ্ট ইউনিট ও অফিসসমূহে নতুন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। নতুন পদায়নের ফলে পুলিশ প্রশাসনের চলমান কার্যক্রমে কোনো ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয় নিশ্চিত করতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

এ রদবদলের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের উচ্চপর্যায়ে একটি উল্লেখযোগ্য পুনর্বিন্যাস ঘটল, যা আগামী দিনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সামগ্রিক কাঠামোয় নতুন কর্মতৎপরতা ও গতিশীলতা আনবে বলে প্রশাসনিক সূত্রে আশা করা হচ্ছে।