নিজস্ব প্রতিবেদক
গুলিবিদ্ধ ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও তিনি এখনো সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাদির বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বৃহস্পতিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবেদ।
ব্রিফিংয়ে আব্দুল্লাহ আল জাবেদ বলেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর জরুরি অস্ত্রোপচারসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হলেও ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। চিকিৎসকরা তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন এবং পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তিনি জানান, চিকিৎসকদের মতে, উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে হাদিকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন হতে পারে।
ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব বলেন, “চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তবে পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত বলা যাচ্ছে না। উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে সরকারকে প্রয়োজনে তাঁকে সিঙ্গাপুর বা অন্য কোনো উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থাসম্পন্ন দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিতে হবে।” তিনি আরও জানান, চিকিৎসার পরবর্তী ধাপ নির্ধারণে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ঘটনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আব্দুল্লাহ আল জাবেদ বলেন, ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় দ্রুত ও কার্যকর তদন্ত প্রয়োজন। তিনি দাবি করেন, এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা জরুরি। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে। তিনি এ ঘটনায় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং তদন্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও পেশাদারত্ব নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের সহিংস ঘটনা শুধু একজন ব্যক্তির ওপর হামলা নয়, বরং সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্যও উদ্বেগজনক। তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করার দাবি জানান তিনি।
এদিকে ইনকিলাব মঞ্চের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব ফাতেমা তাসনিম ঝুমা বলেন, ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় তদন্তের ক্ষেত্রে কোনো পক্ষকেই সন্দেহের বাইরে রাখা উচিত নয়। তাঁর মতে, নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে হলে ঘটনার সব সম্ভাব্য দিক খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তিনি বলেন, হামলার পেছনের কারণ, পরিকল্পনা এবং জড়িত ব্যক্তিদের পরিচয় উদঘাটন করা জরুরি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর দ্রুত ওসমান হাদিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকদের একটি বিশেষ দল তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বে রয়েছে এবং নিয়মিত তাঁর শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করা হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোগীর অবস্থা বিবেচনায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, হামলার পেছনের কারণ ও জড়িতদের শনাক্ত করতে বিভিন্ন দিক থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নেওয়ার কাজ চলছে।
রাজধানীতে প্রকাশ্যে এ ধরনের হামলার ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হলে জনসাধারণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে নিরাপত্তা ব্যবস্থার আরও জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার কথাও উঠে এসেছে।
বর্তমানে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ওসমান হাদির চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতির ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী চিকিৎসা পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।