নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না হলে ১৫ ডিসেম্বর সরকারবিরোধী কর্মসূচিতে নামার ঘোষণা দেন তিনি। শনিবার রাজধানীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এ বক্তব্য দেন।
ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপ না দেখা গেলে সাধারণ মানুষ রাজপথে নামবে। তিনি জানান, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার নিশ্চিত করা না হলে ১৫ ডিসেম্বর সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করা হবে। তবে কর্মসূচির ধরন ও পরিসর সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত জানাননি।
হাদির ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের হামলা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের নিরাপত্তার প্রশ্নে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তার ভাষ্যে, রাজনৈতিক মতভিন্নতার কারণে ব্যক্তির ওপর হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা প্রয়োজন।
বক্তব্যে ড. মাহমুদুর রহমান দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তিনি দাবি করেন, জুলাই মাসের আন্দোলনে যুক্তদের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব, যা যথাযথভাবে পালন করা হয়নি। এ প্রেক্ষাপটে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি আরও জানান, শরিফ ওসমান হাদির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের দায়িত্ব তিনি গ্রহণ করবেন। তার মতে, এ উদ্যোগের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সুরক্ষায় ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। তবে কেন্দ্রটির কাঠামো, কর্মপরিকল্পনা বা প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত তথ্য দেননি।
হামলার ঘটনাটি নিয়ে এখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অগ্রগতির তথ্য জানানো হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পরপরই তদন্ত কার্যক্রম শুরু হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তারের খবর নিশ্চিত করা যায়নি। তদন্তের স্বার্থে অনেক তথ্য প্রকাশ করা হয়নি বলেও জানা যায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ বাড়ছে, যা সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তারা মনে করেন, এসব ঘটনায় দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করা না গেলে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে এবং জনআস্থা ক্ষুণ্ন হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেও উদ্বেগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন নাগরিক আলোচনায় হামলার ঘটনার বিচার দাবি জোরালো হচ্ছে। অনেকেই রাজনৈতিক মতভিন্নতার বাইরে গিয়ে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছেন।
এদিকে ১৫ ডিসেম্বর ঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের প্রস্তুতি নেওয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে সরকার বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি।
পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নির্ভর করবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্তে অগ্রগতি ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর। হামলার ঘটনায় দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিত করা গেলে রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে।