নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনাকে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এ ঘটনাকে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো যাতে বিভক্ত না হয় এবং কোনো পক্ষ যেন এ পরিস্থিতির সুযোগ নিতে না পারে—সে বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন। তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টার উদ্যোগে তিনটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে হামলার শিকার শরিফ ওসমান হাদির পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় সার্বিক পরিস্থিতি, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে মতবিনিময় করা হয়।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক সহাবস্থান ও নির্বাচনী পরিবেশ কীভাবে শান্তিপূর্ণ রাখা যায়, সে বিষয়ে সমন্বিত অবস্থান নির্ধারণ। তিনি উল্লেখ করেন, হামলার ঘটনাটি কেবল একজন রাজনৈতিক কর্মীর ওপর সংঘটিত বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে না; বরং নির্বাচন সামনে রেখে ধারাবাহিকভাবে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির একটি প্রবণতার সূচনা হিসেবে এটি বিবেচিত হচ্ছে।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা ও মতভেদ স্বাভাবিক। তবে সহিংসতা, ভয়ভীতি বা উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি জানান, আলোচনায় অংশ নেওয়া দলগুলো এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে যে পারস্পরিক রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমার মধ্যে থাকবে এবং কোনো কর্মকাণ্ড যেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে।
ব্রিফিংয়ে নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য অটুট রাখা বর্তমান প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনী সময় ঘনিয়ে এলে বিভিন্ন ধরনের গুজব, উসকানি ও সহিংস ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ও সমন্বয় জরুরি। তিনি জানান, এ লক্ষ্যে ভবিষ্যতেও প্রয়োজন অনুযায়ী আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।
আলোচনায় হামলার শিকার শরিফ ওসমান হাদির পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতির বিষয়টি উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের বক্তব্য শোনা এবং তাদের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের বিষয়ে আশ্বস্ত করা ছিল আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন সামনে রেখে সহিংসতার ঘটনা বাড়লে তা ভোটারদের আস্থায় প্রভাব ফেলতে পারে। এ ধরনের ঘটনার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিতভাবে শান্তিপূর্ণ অবস্থান গ্রহণ নির্বাচনকালীন স্থিতিশীলতার জন্য সহায়ক হতে পারে। আলোচনা ও ঐকমত্যের মাধ্যমে রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত হলে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর চাপও কমে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের পরিবেশ বজায় রাখা এবং সব দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সহিংসতার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান এবং পারস্পরিক সংযম প্রদর্শন নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কার্যক্রমে বিশ্বাস করে এবং ভবিষ্যতেও সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান অব্যাহত রাখবে। একই সঙ্গে তারা নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা জোরদার, আইনের শাসন নিশ্চিত এবং রাজনৈতিক অধিকার রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সমন্বিত ভূমিকার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।