নিজস্ব প্রতিবেদক
শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান দেশে গণতন্ত্রের বর্তমান অবস্থা, অতীতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। রোববার ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে একাধিকবার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং বিএনপি বিভিন্ন সময়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছে।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গণতান্ত্রিক ধারা বারবার বাধার সম্মুখীন হয়েছে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংকটের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এসব পরিস্থিতিতে বিএনপি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করার দাবি করে আসছে। তিনি এই বক্তব্যের মাধ্যমে দলটির রাজনৈতিক অবস্থান ও অতীত ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।
বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে বা গণতন্ত্র রক্ষার দাবি তুলেছে, তাদের ওপর বিভিন্ন সময়ে হামলা ও সহিংসতার অভিযোগ উঠেছে। তিনি এ ধরনের ঘটনাকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে বলেন, এসব পরিস্থিতি মোকাবিলা না করা গেলে রাজনৈতিক আন্দোলনে প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের আত্মত্যাগের মূল্য ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে তিনি কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করেননি।
আলোচনা সভায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গেও কথা বলেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যদি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে আসে, তাহলে শিক্ষা, চিকিৎসা ও সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন খাতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার রয়েছে। তাঁর বক্তব্যে এসব খাতের উন্নয়ন ও পেশাগত পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়টি গুরুত্ব পায়।
নজরুল ইসলাম খান তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, যারা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায় বা রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে, তাদের কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার জন্য দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সচেতন থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি ও সাংগঠনিক তৎপরতার মাধ্যমে এসব প্রচেষ্টার জবাব দেওয়া হবে।
শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় বিএনপির অন্যান্য নেতারাও বক্তব্য দেন। বক্তারা শহিদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ স্মরণ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতিতে তাঁদের অবদানের কথা উল্লেখ করেন। আলোচনায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গণতান্ত্রিক অধিকার এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক পরিবেশ নিয়েও আলোচনা হয়।
অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সভায় শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বলা হয়, ১৯৭১ সালের এই দিনে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যার মাধ্যমে দেশকে মেধাশূন্য করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল। সেই ইতিহাস স্মরণ করে বক্তারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, দলটি শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলো নিয়মিতভাবে পালন করে থাকে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে দলীয় অবস্থান তুলে ধরা এবং রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়। আলোচনায় অংশ নেওয়া নেতারা বলেন, গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করাই রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব।
অনুষ্ঠানটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় বলে আয়োজক সূত্র জানিয়েছে। আলোচনা সভা ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।