নিজস্ব প্রতিবেদক
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, অতীতে ফ্যাসিবাদের সঙ্গে অনেকে আপস করলেও জামায়াতে ইসলামী সে পথে হাঁটেনি এবং ভবিষ্যতেও কোনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করবে না। তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ন্যায়বিচার, জবাবদিহি ও জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি, যা ছাড়া টেকসই রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
গতকাল ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জামায়াতের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখা আয়োজিত এই আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের আমির মো. নুরুল ইসলাম বুলবুল। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এবং মাওলানা এ টি এম মাসুম। আলোচনাসভায় বক্তারা বিজয় দিবসের তাৎপর্য, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন জাতীয় ইস্যু নিয়ে বক্তব্য দেন।
ডা. শফিকুর রহমান তাঁর বক্তব্যে সম্প্রতি ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষ সহমর্মিতা প্রকাশ করলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দেওয়া বক্তব্যে তাঁরা ক্ষুব্ধ। তাঁর মতে, ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন এবং সংশ্লিষ্টদের নিজ নিজ অবস্থান পরিষ্কার করা উচিত। তিনি আরও বলেন, কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক কর্মী হামলার শিকার হওয়ার পরও যদি সরকার কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তবে তা রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনে ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়।
হামলার ঘটনায় এখনো অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন জামায়াত আমির। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনার পর দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের আইনের আওতায় আনা সরকারের মৌলিক দায়িত্ব। তিনি এই প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এবং দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টার পদত্যাগের বিষয়টি আলোচনায় আনেন। তাঁর বক্তব্যে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও নাগরিক সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব পায়।
আলোচনাসভায় ডা. শফিকুর রহমান দেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় ধরে দেশ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংকট ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে গেছে। তাঁর মতে, সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট ঐক্য ধরে রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই ঐক্যকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রের কাঠামো সংস্কার এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন তিনি।
জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে কী ধরনের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করবে, সে বিষয়েও বক্তব্য দেন দলটির আমির। তিনি বলেন, দলটি ক্ষমতায় গেলে সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে সরকার গঠনের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে। তাঁর বক্তব্যে বহুদলীয় অংশগ্রহণ ও সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি গুরুত্ব পায়, যা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম প্রসঙ্গেও কথা বলেন ডা. শফিকুর রহমান। তিনি জামায়াতকে কেন্দ্র করে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে খণ্ডিত বা বিকৃত তথ্য উপস্থাপন না করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ন্যায্য ও তথ্যভিত্তিক সমালোচনা দলটি গ্রহণ করে, তবে এমন সাংবাদিকতা থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন যা দেশের স্বার্থের পরিপন্থী হতে পারে। তাঁর মতে, দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আলোচনাসভায় উপস্থিত নেতারা বিজয় দিবসের চেতনার আলোকে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। বক্তারা বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রেখে জাতীয় ঐক্য জোরদার করা জরুরি। সভা শেষে দেশের সার্বিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়।