নিজস্ব প্রতিবেদক
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক কর্মসূচিতে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ভবিষ্যতের বাংলাদেশ পুরোনো রাজনৈতিক চর্চা পরিহার করে নতুন ব্যবস্থার রাজনীতির পথে পরিচালিত হবে। তিনি বলেন, এই রাজনীতি সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ, মামলাবাজি, দুর্নীতি ও অনাচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। গতকাল রাজধানীতে জামায়াতে ইসলামীর যুব বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত ‘যুব ম্যারাথন’ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, তরুণদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, তরুণ সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া রাষ্ট্র ও সমাজে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব নয়। এ প্রেক্ষাপটে যুব সমাজকে সংগঠিত ও সচেতন করার লক্ষ্যে এ ধরনের কর্মসূচি আয়োজন করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। তার বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন বাধা ও প্রতিকূলতা থাকলেও তরুণদের এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, জনগণ কোনো ধরনের কারিগরি অনিয়ম বা ষড়যন্ত্র মেনে নেবে না। তিনি নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, কমিশনের কাছে বিশেষ কোনো সুবিধা প্রত্যাশা করা হচ্ছে না। তবে কমিশন যদি কোনো পক্ষের প্রতি পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন করে, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, অবৈধ অর্থের প্রভাব খাটিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা প্রতিহত করা হবে।
কালো টাকার প্রভাব সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জনগণ এখন আগের তুলনায় বেশি সচেতন। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ জনগণকে অর্থের মাধ্যমে প্রভাবিত করা সম্ভব হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তার মতে, সচেতন নাগরিক সমাজের ভূমিকা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য রাখতে সহায়ক হবে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে জামায়াত আমির বলেন, পাকিস্তান আমলে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক নীতির কারণে পূর্ব পাকিস্তানে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, সত্তরের নির্বাচনের পর জনগণের কাছে বৈষম্যহীন শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তবে স্বাধীনতার পর সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। তার বক্তব্যে তিনি বলেন, একপর্যায়ে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক অধিকার সংকুচিত করা হয়েছিল, সংবাদপত্র বন্ধ করা হয়েছিল এবং মানুষের ভোটাধিকার সীমিত হয়েছিল।
বিজয় দিবসের তাৎপর্য উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এই দিবস দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকারকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তার মতে, বিজয় দিবসের চেতনাকে ধারণ করে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, তরুণদের মধ্যে এই চেতনা ছড়িয়ে দিতে পারলে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে তোলা সহজ হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। কর্মসূচি পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ কামাল হোসেন। উদ্বোধনী সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ডা. ফখরুদ্দিন মানিকসহ দলের অন্যান্য নেতারা।
যুব ম্যারাথনে প্রায় অর্ধলাখ তরুণ অংশ নেন বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। ম্যারাথনটি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ ও সায়েন্সল্যাব অতিক্রম করে মানিক মিয়া এভিনিউতে গিয়ে শেষ হয়। আয়োজকদের মতে, বিজয় দিবসের চেতনা তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া এবং রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিই এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য।