নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশের সামনে এখনও বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাকি রয়েছে এবং এসব কাজ সম্পন্ন করতে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মী হোক বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী—যারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে আস্থা রাখেন, দেশের অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করা সবার সম্মিলিত দায়িত্ব।
রোববার সন্ধ্যায় বগুড়া শহরের শহীদ টিটু মিলনায়তনে জুলাই শহীদদের স্মরণে নির্মিত একটি ডিজিটাল স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তব্যের শুরুতে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, শহীদ ওসমান হাদি গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারায় বিশ্বাসী ছিলেন এবং ভোটের রাজনীতির মধ্য দিয়েই পরিবর্তন আনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তারেক রহমানের ভাষায়, গণতন্ত্রের পথেই ছিলেন বলেই তিনি জনগণের প্রতিনিধিত্বের জন্য প্রার্থী হয়েছিলেন।
জুলাই শহীদদের স্মরণ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শহীদ হাদির প্রতি, জুলাইয়ের শহীদ ও যোদ্ধাদের প্রতি এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও যোদ্ধাদের প্রতি যথাযথ সম্মান জানাতে হলে দেশের মানুষের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই হতে হবে প্রধান লক্ষ্য। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে এবং রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তারেক রহমান উল্লেখ করেন, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হওয়া উচিত দেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়া এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করা।
তিনি অভিযোগ করেন, দীর্ঘ সময় ধরে স্বৈরাচারী শাসনের কারণে দেশের বিভিন্ন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার বক্তব্যে বলা হয়, অর্থনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ নানা ক্ষেত্রে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেখান থেকে দেশকে পুনর্গঠনের জন্য কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। তারেক রহমান বলেন, দেশকে ধ্বংসের কিনারা থেকে ফিরিয়ে আনতে সুপরিকল্পিত উদ্যোগ এবং জনসম্পৃক্ত উন্নয়ন কার্যক্রম প্রয়োজন।
সামনের দিনগুলো সহজ হবে না উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় অস্থিরতা ও অরাজকতার চিত্র দেখা যাচ্ছে। তিনি জানান, কিছু মহল পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে এবং এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। তার মতে, গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক সহনশীলতা জরুরি।
দেশের উন্নয়নের অগ্রাধিকার খাত হিসেবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার কথা তুলে ধরেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, প্রায় বিশ কোটি মানুষের জন্য কার্যকর ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। একই সঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি শিক্ষকদের মানোন্নয়নে প্রশিক্ষণ ও পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন।
তরুণদের কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, দেশের অগ্রগতির জন্য তরুণ জনগোষ্ঠীর সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ আরও বাড়তে পারে বলে তিনি সতর্ক করেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক নারী; এই জনগোষ্ঠীকে পিছিয়ে রেখে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারীদের শিক্ষিত করা এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বক্তব্যের শেষভাগে তারেক রহমান দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একটি সংকটময় সময় থেকে দেশকে স্থিতিশীলতার পথে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দেশকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি বলেন, সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও জাতীয় ঐক্যের পথে দেশকে এগিয়ে নেওয়াই এখন সময়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ।