রাজনীতি ডেস্ক
ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সম্প্রতি আয়োজিত তিন দিনের কর্মশালার মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। কর্মশালায় উপস্থিত যেসব প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছিল, তাদের প্রার্থিতা প্রায় নিশ্চিত বলে দলের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। অন্যদিকে, যাদের ডাকা হয়নি, সেসব আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্রগুলো জানান, কর্মশালায় অংশগ্রহণ না করা প্রার্থীদের মধ্যে ঝালকাঠি-২ আসনের ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টু, চট্টগ্রাম-৬ আসনের গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও যশোর-৬ আসনের কাজী রওনকুল ইসলাম অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে চট্টগ্রাম-৪ আসনের প্রার্থী কাজী সালাউদ্দিনের পরিবর্তে আসলাম চৌধুরীকে ডাকা হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, যেসব আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে নতুন প্রার্থীর মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
২৮টি ফাঁকা আসনের মধ্যে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে শাহাদাত হোসেন সেলিম ও লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে আশরাফ উদ্দিন নিজানের নাম কর্মশালায় উপস্থিত প্রার্থীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ আসনগুলোতে বিএনপি ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের মাধ্যমে মনোনয়ন নিশ্চিত করবে, বাকি কিছু আসন মিত্র দলের জন্য রাখা হয়েছে।
বাগেরহাট জেলার চারটি সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাগেরহাট-১ আসনে কপিল কৃষ্ণ মন্ডল, বাগেরহাট-২ আসনে ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন, বাগেরহাট-৩ আসনে ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম ও বাগেরহাট-৪ আসনে সোমনাথ দে। এই চারজন প্রার্থী গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন এবং তাদের মনোনয়ন মোটামুটি নিশ্চিত বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
কর্মশালায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে প্রার্থীদের নানা দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। কর্মশালার সময় প্রার্থীদের ফ্যামিলি কার্ড, হেলথ কার্ড, কৃষি কার্ডসহ ডিজিটাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কৃষক ও নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার কৌশল সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনি এলাকা, কেন্দ্রভিত্তিক ভোটার তালিকা, ভোটারদের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া, প্রচারণা এবং নির্বাচনি এজেন্ট ও পোলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, কর্মশালার মাধ্যমে নেতা-কর্মীরা এলাকায় গিয়ে ভোটারদের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এতে ভোটাররা পারিপার্শ্বিক তথ্যের ভিত্তিতে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন এবং ভুল তথ্যের সম্ভাবনা কমবে।
প্রধানত কর্মশালার প্রথম দিনে পঞ্চগড়-১ থেকে শুরু করে রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়। দ্বিতীয় দিনে বরিশাল, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের প্রার্থীদের সঙ্গে এবং শেষ দিনে ফরিদপুর, সিলেট, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগের প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা হয়। প্রতিটি আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারা সরাসরি যোগাযোগ রাখেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।
লক্ষ্মীপুরের চারটি আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত হয়েছেন: লক্ষ্মীপুর-১ আসনে শাহাদাত হোসেন সেলিম, লক্ষ্মীপুর-২ আসনে আবুল খায়ের ভূঁইয়া, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এবং লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে আশরাফ উদ্দিন নিজান। লক্ষ্মীপুর-১ আসনে সেলিম এলডিপির চেয়ারম্যান পদ থেকে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন, ফলে আসনটি ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত হয়। অন্যদিকে লক্ষ্মীপুর-৪ আসন মিত্র দলের জন্য ফাঁকা রাখা হলেও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আশরাফ উদ্দিন নিজানের মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছে।
গত ৩ নভেম্বর বিএনপি প্রথম দফায় ২৩৬টি আসনে এবং ৪ ডিসেম্বর আরও ৩৬টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে। এরপর ধারাবাহিকভাবে তিন দিন ধরে কর্মশালার মাধ্যমে প্রার্থীদের নির্বাচন-প্রস্তুতি, প্রশাসনিক ও প্রযুক্তিগত দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।