রাজনীতি ডেস্ক
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতিতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাম্প্রতিক ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সংগঠনটির প্রার্থী ও সমর্থিত প্যানেল জয়লাভ করার পর তাদের নেতৃত্ব ও কার্যক্রম ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া একাধিক বক্তব্য ও পর্যবেক্ষণে সংগঠনটির আচরণ, বক্তব্য এবং রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ছাত্র রাজনীতিতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মকাণ্ড নিয়ে ভিন্ন চিত্র লক্ষ্য করা যায়। সে সময় বিভিন্ন পর্যবেক্ষক ও ক্যাম্পাস সংশ্লিষ্ট মহলের একটি অংশ সংগঠনটির কার্যক্রমকে শৃঙ্খলাপূর্ণ ও শিক্ষাবান্ধব হিসেবে উল্লেখ করেন। ছাত্র অধিকার, শিক্ষার পরিবেশ রক্ষা এবং সহনশীল রাজনৈতিক চর্চার বিষয়ে তাদের অবস্থান তখন ইতিবাচক হিসেবে আলোচিত হয়। ওই সময় সংগঠনটির পক্ষ থেকে সহিংসতা পরিহার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় বজায় রাখার অঙ্গীকারও তুলে ধরা হয়।
তবে সাম্প্রতিক ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের পর পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সংগঠনটির কিছু নেতাকর্মীর আচরণ নিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং সাংবাদিকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা, ভিন্নমত দমনের প্রবণতা, গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং শিক্ষকদের প্রতি অসম্মানজনক বক্তব্য। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক মহলেও আলোচনা শুরু হয়েছে।
ক্যাম্পাস সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগে যে সহনশীল ও ইতিবাচক রাজনৈতিক চর্চার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, বাস্তবে তার সঙ্গে বর্তমান আচরণের মিল পাওয়া যাচ্ছে না—এমন ধারণা তৈরি হয়েছে অনেকের মধ্যে। নির্বাচনের পর মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে নেতৃত্বের ভূমিকা ও বক্তব্যে যে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, তা ছাত্র রাজনীতির পরিবেশের জন্য উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সংগঠনের প্রতিনিধিরা বলছেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব পাওয়ার অর্থ দায়িত্ব আরও বেড়ে যাওয়া। ছাত্র রাজনীতির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ উন্নয়ন এবং ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করা। কোনো সংগঠনের আচরণ যদি বিভাজন তৈরি করে বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে তা দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষাঙ্গনের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস দীর্ঘ এবং জটিল। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের সংগঠনগুলো ক্যাম্পাসে সক্রিয় ভূমিকা রেখে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সহিংসতা, দখলদারত্ব ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগও উঠে এসেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিক্ষাঙ্গনে শান্তিপূর্ণ ও শিক্ষাবান্ধব রাজনীতির দাবি জোরালো হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে কোনো ছাত্র সংগঠনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় বা স্থানীয় পর্যায়ের দায়িত্বশীল কেউ প্রকাশ্যে অভিযোগগুলোর বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে বিভিন্ন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সংগঠনের নেতারা ক্যাম্পাস রাজনীতিতে দায়িত্বশীল আচরণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং আইনের শাসন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যৎ অনেকাংশে নির্ভর করছে নির্বাচিত নেতৃত্বের আচরণ ও সিদ্ধান্তের ওপর। অভিযোগগুলোর যথাযথ ও স্বচ্ছ পর্যালোচনা, সংশ্লিষ্ট পক্ষের বক্তব্য এবং প্রশাসনের ভূমিকা পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হবে। ক্যাম্পাসে স্থিতিশীলতা ও শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখতে সব ছাত্র সংগঠনেরই দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।