খেলাধুলা ডেস্ক
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) চলমান অ্যাশেজ সিরিজের টেস্ট ম্যাচে পেসারদের আধিপত্যে ব্যাটারদের সংগ্রাম আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে মাত্র ১০ ওভার ব্যাট করতে পেরেছে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া, যেখানে ইংল্যান্ডের তিন পেসারের গতি, সুইং ও নিয়ন্ত্রিত লাইন–লেন্থের সামনে তারা থেমে গেছে মাত্র ১৩২ রানে। প্রথম ইনিংসে ৪২ রানের লিড থাকায় দুই ইনিংস মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ২৮৪ রানে, যা ইংল্যান্ডের সামনে ১৭৪ রানের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
ম্যাচের প্রথম দিনেই ১৩০ বছরের পুরোনো টেস্ট রেকর্ড স্পর্শ করে ২০ উইকেট পতনের বিরল নজির গড়ে এমসিজি। দ্বিতীয় দিনেও সেই ধারাবাহিকতায় পেসারদের দাপট আরও তীব্র হয়েছে। গত ৩০ বছরে চলমান টেস্ট ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র ৪৭৯ বল খেলার পর অলআউট হওয়ার ঘটনা টেস্ট ইতিহাসে তাদের জন্য অন্যতম সংক্ষিপ্ত ব্যাটিং অধ্যায় হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে। ২০০০ সালের পর টেস্ট ক্রিকেটে ইনিংস দুটিতে ২৮৪ রান করা অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ। একই সময়সীমায় ১৩২ রানে অলআউট হওয়া অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসও টেস্ট ক্রিকেটে তৃতীয় সর্বনিম্ন অলআউটের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই ৪৬ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। মধ্যাহ্ন বিরতির পর দ্বিতীয় সেশনে ইংল্যান্ডের পেস আক্রমণের মুখে দ্রুত উইকেট হারাতে থাকে স্টিভ স্মিথের নেতৃত্বাধীন দল। ৮৬ রান তুলতেই ১০ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং অর্ডার ভেঙে পড়ে। স্বাগতিকদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেন ট্রাভিস হেড। ৬৭ বলের এই ইনিংসে তিনি ৪টি চার মেরে দলের পক্ষে একমাত্র কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাশেজে ব্যক্তিগত মাইলফলক স্পর্শ করার পথে ছিলেন স্টিভ স্মিথ। সিরিজে তার মোট রান ৩৫৫৩; অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অ্যালান বোর্ডারের ৩৫৫৮ রান অতিক্রম করতে তার প্রয়োজন ছিল মাত্র ৫ রান। তবে দলীয় বিপর্যয়ের মধ্যেও ২৪ রানে অপরাজিত থেকে ইনিংস শেষ করেন স্মিথ, বোর্ডারের রেকর্ড থেকে মাত্র ৫ রান দূরে থেমে থেকে পরবর্তী ইনিংসের অপেক্ষায় রইলেন তিনি।
ক্যামেরন গ্রিন ১৯ রান যোগ করেন। ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার তিন ব্যাটার ছাড়া কেউ দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি, যা টেস্ট ম্যাচে দলের গভীরতা ও মিডল অর্ডার ব্যর্থতার স্পষ্ট প্রতিফলন। ৩৪.৩ ওভার ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া গুটিয়ে যায় ১৩২ রানে। এর আগে প্রথম দিন ৪৫.২ ওভারে ১৫২ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস। বিপরীতে ইংল্যান্ড ২৯.৫ ওভারে ১১০ রান তুলতেই তাদের প্রথম ইনিংসও শেষ হয়।
এমসিজির এই উইকেট ঐতিহাসিকভাবে ব্যাটিং–বান্ধব হিসেবে পরিচিত হলেও এই ম্যাচে পিচ ও আবহাওয়ার মিশ্রণে পেসারদের জন্য হয়ে উঠেছে সহায়ক। ম্যাচের দুই দিনে ৩০ উইকেট পতন প্রমাণ করে, পিচে বাউন্স, সুইং ও মুভমেন্ট ব্যাটারদের জন্য অপ্রত্যাশিত পরীক্ষা তৈরি করেছে।
ইংল্যান্ডের পেসার গাস অ্যাটকিনসন চোটের কারণে দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ ওভারের বেশি বোলিং করতে পারেননি। তবে সীমিত বোলিংয়ের মধ্যেই তিনি ১টি উইকেট নেন। অ্যাটকিনসনের অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব ভাগাভাগি করে বাকি তিন পেসার অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনকে আরও চাপে ফেলেন। ব্রাইডন কার্স সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট শিকার করেন। এ ছাড়া বেন স্টোকস ৩টি এবং জশ টাং ২টি উইকেট নেন। ইংল্যান্ডের বোলিং বিশ্লেষণে স্পষ্ট, লাইন–লেন্থে শৃঙ্খলা, নতুন বলের সুইং ও শর্ট–পিচ ডেলিভারির কৌশল মিলে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের দ্রুত ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে তারা।
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং বিপর্যয়ের নেপথ্যে টেকনিক্যাল ভুল, সুইং বলের বিচার করতে ব্যর্থতা এবং মিডল–স্টাম্প লাইনে ধারাবাহিক চাপকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। টেস্ট ম্যাচে ঘরের মাঠে এত কম ডেলিভারি খেলে অলআউট হওয়া অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং কৌশল, প্রস্তুতি ও অভিযোজন সক্ষমতা নিয়ে বিশ্লেষণের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করেছে।
ইংল্যান্ডের সামনে ১৭৪ রানের লক্ষ্য কঠিন মনে না হলেও, এই পিচে পেসারদের দাপট বিবেচনায় সহজও বলা যাচ্ছে না। পিচের আচরণ ও ম্যাচের গতিপ্রকৃতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, শেষ দিনে ম্যাচ ফল নির্ধারণে বোলিংই মুখ্য ভূমিকা রাখবে।
অ্যাশেজের মতো ঐতিহ্যবাহী সিরিজে এমন পেস–প্রধান টেস্ট ম্যাচ সব সময়ই আলোচনার জন্ম দেয়। এমসিজিতে চলমান এই টেস্ট ম্যাচও তার ব্যতিক্রম নয়। গতি, সুইং, চোট, মাইলফলক ও রেকর্ডের সমন্বয়ে ম্যাচটি পরিণত হয়েছে সাম্প্রতিক অ্যাশেজের অন্যতম নাটকীয় অধ্যায়ে। ম্যাচের পরবর্তী দিনগুলোতে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং প্রতিরোধ, অস্ট্রেলিয়ার বোলিং পরিকল্পনা ও পিচের বিবর্তন—সব মিলিয়ে ক্রিকেট–বিশ্লেষকদের জন্য এই ম্যাচ দীর্ঘদিন আলোচনার খোরাক হয়ে থাকবে।