নিজস্ব প্রতিবেদক
ঘন কুয়াশার কারণে আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাভাবিক বিমান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে একাধিক আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট নির্ধারিত গন্তব্যে অবতরণ করতে না পেরে বিকল্প বিমানবন্দরে পাঠানো হয়। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কুয়াশাজনিত কারণে দৃষ্টিসীমা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় মোট আটটি ফ্লাইট ডাইভার্ট করা হয়েছে।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, শনিবার ভোর থেকে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় ঘন কুয়াশা বিরাজ করতে থাকে। এর ফলে রানওয়ে ও আকাশপথে দৃশ্যমানতা নিরাপদ সীমার নিচে নেমে আসে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) এবং সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে ফ্লাইট ডাইভার্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়। ডাইভার্ট হওয়া ফ্লাইটগুলোর মধ্যে তিনটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এছাড়া চারটি ফ্লাইট ভারতের কলকাতা বিমানবন্দরে এবং একটি ফ্লাইট থাইল্যান্ডের ব্যাংকক বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করেছে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, যাত্রী ও বিমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এ ধরনের সিদ্ধান্তের প্রধান উদ্দেশ্য। কুয়াশার কারণে যখন দৃষ্টিসীমা নির্ধারিত মানের নিচে নেমে যায়, তখন অবতরণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল বিধিমালা অনুসরণ করে বিকল্প বিমানবন্দরে ফ্লাইট পাঠানো হয়। কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, আবহাওয়া পরিস্থিতি উন্নত হলে এবং দৃশ্যমানতা স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে এলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট অপারেশন ধাপে ধাপে স্বাভাবিক করা হবে।
এদিকে, ফ্লাইট ডাইভার্ট ও বিলম্বের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। অনেক যাত্রী নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে অনিশ্চয়তায় পড়েন। তবে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিলম্বিত ও ডাইভার্ট হওয়া ফ্লাইটের যাত্রীদের জন্য পরিস্থিতি অনুযায়ী খাবার, পানীয় এবং দীর্ঘ বিলম্বের ক্ষেত্রে হোটেল সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
একাধিক যাত্রী জানান, শীতকালীন কুয়াশার কারণে এমন পরিস্থিতি নতুন নয়, তবে হঠাৎ ফ্লাইট ডাইভার্ট হওয়ায় অনেকেই আগাম তথ্য না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন। কেউ কেউ আন্তর্জাতিক সংযোগ ফ্লাইট মিস করার আশঙ্কাও প্রকাশ করেন। এয়ারলাইন সূত্রে জানা যায়, আবহাওয়ার কারণে সৃষ্ট এ ধরনের পরিস্থিতিতে যাত্রীদের আগাম তথ্য দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়, তবে কুয়াশার ঘনত্ব দ্রুত পরিবর্তিত হওয়ায় অনেক সময় তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শীত মৌসুমে বিশেষ করে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে ভোর ও সকালে ঘন কুয়াশা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। বাতাসের গতি কম থাকলে এবং আর্দ্রতা বেশি হলে কুয়াশার তীব্রতা বাড়ে, যা বিমান চলাচলের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও নির্দিষ্ট সীমার নিচে দৃশ্যমানতা নেমে গেলে নিরাপত্তার স্বার্থে অবতরণ বন্ধ রাখাই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে, শীতকালীন আবহাওয়ার কারণে সম্ভাব্য বিলম্ব বা পরিবর্তনের বিষয়ে আগেই সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে। একই সঙ্গে আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফ্লাইট কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখা হয়েছে বলে জানানো হয়।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, কুয়াশার পরিস্থিতি উন্নতির দিকে গেলে ধীরে ধীরে ফ্লাইট অবতরণ ও উড্ডয়ন স্বাভাবিক হওয়ার আশা করা হচ্ছে। তবে আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।