জেলা প্রতিনিধি
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় একটি মাদ্রাসা ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় নারী ও শিশুসহ চারজন আহত হয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে হাসনাবাদের উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা ভবনে এ বিস্ফোরণ ঘটে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ দাবি করেছে, এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়; বরং গোপনে পরিকল্পিতভাবে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার প্রস্তুতির সময় বিস্ফোরণটি ঘটেছে।
বিস্ফোরণের পরপরই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা বিকট শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে। ঘটনার তদন্তে সিআইডি, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিটসহ একাধিক সংস্থা কাজ করছে।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান শনিবার সাংবাদিকদের জানান, ঘটনাস্থল থেকে বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্য, চারটি ককটেল সদৃশ বস্তু, একটি ল্যাপটপ ও দুটি মনিটর উদ্ধার করা হয়েছে। এসব আলামত পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন আছিয়া (২৮), ইয়াসমিন আক্তার (৩০) ও আসমানি খাতুন ওরফে আসমা (৩৪)। তবে মাদ্রাসার পরিচালক ও মূল অভিযুক্ত শেখ আল আমিন পলাতক রয়েছেন।
পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে, যা তদন্তে সহায়ক হচ্ছে। তিনি আরও জানান, শেখ আল আমিন এর আগেও একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন থানায় মোট সাতটি মামলা রয়েছে। একইভাবে গ্রেপ্তার আসমানি খাতুনের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ভবন মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২২ সাল থেকে শেখ আল আমিন ওই ভবনে উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা পরিচালনা করে আসছিলেন। একই ভবনে তিনি তার পরিবারসহ বসবাস করতেন। বিস্ফোরণের ঘটনায় তার দুই শিশুসন্তান আহত হয়েছে।
ভবন মালিক পারভীন বেগম জানান, প্রায় তিন বছর ধরে আল আমিন ও তার স্ত্রী আছিয়া তার কাছ থেকে বাড়িটি ভাড়া নিয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা করছিলেন। তিনি বলেন, নিয়মিত খোঁজখবর নিলেও মাদ্রাসার আড়ালে কী ধরনের কার্যক্রম চলছিল, তা তিনি বুঝতে পারেননি।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ককটেল, দাহ্য পদার্থ এবং বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে এবং তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
হাসনাবাদ এলাকার এক বাসিন্দা জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ একটি বিকট শব্দ শোনা যায়। পরে দেখা যায়, মাদ্রাসা ভবনের পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষের দেয়াল উড়ে গেছে। বিস্ফোরণে একতলা ভবনের দুটি কক্ষের দেয়াল সম্পূর্ণ ধসে পড়ে। পাশাপাশি ছাদ ও বিমে ফাটল দেখা দেয় এবং পাশের আরও দুটি কক্ষেও ফাটল সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়দের ধারণা, মাদ্রাসাটিতে সাধারণত ৩০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করত। তবে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় মাদ্রাসাটি বন্ধ ছিল। এ কারণে বড় ধরনের প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
বিস্ফোরণের ঘটনায় আহতদের মধ্যে শেখ আল আমিনের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন। তার স্ত্রী আছিয়া বেগম এবং তিন সন্তানের মধ্যে দুই ছেলে—একজনের বয়স ১০ বছর ও অন্যজনের বয়স ৭ বছর—আহত হয়েছে। আহত দুই শিশু বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে কোনো ধরনের নাশকতা বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তদন্ত শেষে প্রকৃত উদ্দেশ্য ও জড়িত নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে বলে তিনি জানান।