জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তার অবদানের জন্য জাতীয় পর্যায়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। এ মন্তব্য করেছেন জার্মান গণমাধ্যম ডয়েচে ভ্যালেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান।
সাক্ষাৎকারে বার্গম্যান খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন ও লড়াই-সংগ্রামের প্রসঙ্গে বলেন, খালেদা জিয়াকে সবচেয়ে আগে স্মরণ করা হবে ১৯৮০-এর দশকে সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের জন্য। ওই সময় তিনি আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের সঙ্গে যৌথভাবে তীব্র রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলেন, যা শেষে এরশাদের পতন এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
স্বৈরাচার পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়া বিজয়ী হন। বার্গম্যান বলেন, তখন প্রচলিত ধারণা ছিল যে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়ী হবে, কিন্তু বিএনপি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে বিজয়ী হয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন চিহ্নিত হয়েছে শেখ হাসিনার সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে।
বার্গম্যান খালেদা জিয়ার নারী অধিকার রক্ষা এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অবদানও প্রশংসা করেছেন। তবে, তিনি উল্লেখ করেন যে খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মেয়াদে (২০০১-২০০৬) ক্ষমতায় থাকাকালে দুর্নীতি বেড়ে যায়। তিনি বলেন, “যদিও খালেদা জিয়া একটি দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হন এবং আওয়ামী লীগের আমলে কারাবন্দি হন, তবুও তাৎপর্যপূর্ণভাবে তিনি এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সংশ্লিষ্ট তেমন কোনো সম্পদের প্রমাণও পাওয়া যায়নি।”
সাংবাদিক বার্গম্যান এ বিষয়েও মত প্রকাশ করেন যে, খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে বিএনপিতে তার প্রভাব কমে গিয়েছিল। তবে তার ছেলে, দলের সিনিয়র নেতা তারেক রহমান লন্ডন থেকে দলের কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য প্রভাব রেখেছিলেন। ভবিষ্যতে তার মায়ের উপর তার প্রভাব কতটা থাকবে তা অনিশ্চিত। বার্গম্যান বলেন, বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে তার সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন, সংগ্রাম ও তার নেতৃস্থানীয় ভূমিকা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, নির্বাচনে বিজয়, নারী অধিকার রক্ষা এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তার অবদান আজও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের নজর কাড়ে।