1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
  3. jeradmin@deshmediabd.com : :
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:০৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ

সংস্কারে নতুন বাংলাদেশের চার্টার

রিপোর্টার
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ১ বার দেখা হয়েছে

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আলোচনা করা হবে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’-এর মাধ্যমে এই আলোচনা হবে। এরপর তৃতীয় ধাপে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইন ও নীতি প্রণয়নের কাজ শুরু হবে। চতুর্থ ধাপে হবে বাস্তবায়ন।

এসব প্রক্রিয়ায় তৈরি হবে নতুন বাংলাদেশের চার্টার এবং সেই চার্টারের ভিত্তিতেই দেশে আগামী এবং পরের নির্বাচনগুলোও অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বুধবার চার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বক্তব্য থেকে এই তথ্য ও প্রত্যাশা মিলেছে।
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রধান উপদেষ্টার হাতে তাঁদের সংস্কার প্রতিবেদন তুলে দেন। এ সময় এই চার সংস্কার কমিশনের অন্য সদস্যরাও উপিস্থিত ছিলেন।

 

প্রধান উপদেষ্টা যা বললেন

সংস্কার প্রতিবেদন গ্রহণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এসব সংস্কার প্রতিবেদন থেকে হবে নতুন বাংলাদেশের চার্টার, তার ভিত্তিতেই হবে নির্বাচন। চারটি সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তা ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই সংস্কার প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা যেটা গঠন করতে চাচ্ছি, সেটার উদ্দেশ্য হলো এটা থেকে গণ-অভ্যুত্থানের একটি চার্টার তৈরি করা হবে, যা হবে নতুন বাংলাদেশের একটি চার্টার। এটা মতৈক্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হবে। নির্বাচন হবে, সব কিছুই হবে; কিন্তু চার্টার থেকে সরা যাবে না।


প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বহু ধরনের কমিটি হয়, রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়, আনুষ্ঠানিকতা হয়; কিন্তু আজকের আনুষ্ঠানিকতা সেগুলোর চেয়ে অনেক ঊর্ধ্বে। আজকের এই ঘটনা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। কারণ ইতিহাসের প্রবাহ থেকেই এই কমিশনগুলোর সৃষ্টি হয়েছে।’

‘একটা ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির হঠাৎ পুনরুত্থান হয়েছে, মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে’ মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সেখান থেকেই ইতিহাসের সৃষ্টি, আজকের এই অনুষ্ঠান সেই ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

এটা বিচ্ছিন্ন কোনো প্রতিবেদন নয়। আজ যে প্রতিবেদনগুলো আমরা হাতে নিলাম, অবশ্যই এটা আমাদের দেশের জন্য বড় একটি চর্চা। কেউ সেটা অস্বীকার করবে না।’
সংস্কার কমিশনের সদস্যদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে সেটার কাঠামো তৈরির কাজ আপনাদের হাতে দিয়েছিলাম কমিশনের মাধ্যমে। স্বপ্ন আছে এখনো, সেই স্বপ্নের রূপরেখাগুলো তুলে ধরতে হবে। এটা শেষ নয়, একটি অধ্যায়ের শুরু হলো। স্বপ্ন ও অভ্যুত্থান-পরবর্তী তার যে যাত্রা, সেটা শুরু হলো। এর বড় একটি অংশ এই প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হবে যে আমরা কী করতে চাইছি। এটার মাধ্যমে আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা শুরু করব। সবার মন এতে সায় দিচ্ছে কি না, অঙ্গীকারগুলো পূরণ হচ্ছে কি না—এই আলোচনার রসদ আপনারা তৈরি করে দিয়েছেন।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে সবার মতৈক্য হবে, আর কিছু অংশের সবাই একমত হবেন। তা না হলে আমরা কী স্বপ্ন দেখলাম? আমরা নিজেরা স্বপ্ন দেখলাম, আর সেই স্বপ্নে মানুষের অংশ নেই, সেটা তো হতে পারে না। আমরা সেই স্বপ্নের কতটুকু এখানে নিয়ে এসেছি, সেটার জন্যই এই আলোচনা। এটা বাইরে থেকে চাপানোর কোনো জিনিস নয়, ভেতর থেকে উদ্ভূত একটি জিনিস।’

সংস্কার কমিশনগুলোর সদস্যদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘যেহেতু আপনারাই তাদের পক্ষ থেকে স্বপ্ন দেখেছেন, কিভাবে তাদের স্বপ্ন আপনাদের সঙ্গে একাকার হয়ে যাবে। তার মাধ্যমে আমরা যেটা গঠন করতে চাচ্ছি, যার উদ্দেশ্য হলো এটা গণ-অভ্যুত্থানের একটি চার্টার তৈরি হবে। নতুন বাংলাদেশের একটি চার্টার, সে রকম চার্টার মতৈক্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হবে। নির্বাচন হবে, সব কিছুই হবে; কিন্তু চার্টার থেকে সরে যাবে না। এই চার্টার থেকে যাবে, ইতিহাসের অংশ হিসেবে এটা আমাদের জাতীয় কমিটমেন্ট। এটা কোনো দলীয় কমিটমেন্ট নয়। আমরা আশা করছি, সব দল এই চার্টারে সাইন আপ করবে। এটা বাংলাদেশি, বাঙালি জাতির একটি সনদ, যে সনদ আমরা বুকে নিয়ে অগ্রসর হব। যত দ্রুত পারি, যত বেশি পরিমাণে এটা বাস্তবায়ন করতে পারি করতে থাকব। ভবিষ্যতে যে নির্বাচন হবে, সেটাও হবে এই চার্টারের ভিত্তিতে। সেটাও যেন ঐকমত্যের সরকার হয়, (পরবর্তী সরকারও যেন বলে) যে আমরা চার্টারকে ধরে রেখেছি। যত কিছুই হোক, এটা যেন হাত থেকে ছেড়ে না দিই। তা না হলে এই স্বপ্নের যে কন্টিনিউয়িটি, সেটি থাকবে কী করে! আমরা সেই স্বপ্নের কন্টিনিউয়িটি চাই, বাস্তবায়ন চাই। নির্বাচনও এই চার্টারের একটি অংশ হবে, ঐকমত্যের নির্বাচন হবে। তা না হলে চার্টার হারিয়ে যাবে। কাজেই এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস।’

 

ফেব্রুয়ারিতে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা : বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, সংস্কার কমিশনগুলোর দেওয়া সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আলোচনা শুরু হবে ফেব্রুয়ারি মাসে। এ সময় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, কমিশনগুলোতে সমন্বয়সহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে। তবে জানুয়ারির মধ্যেই এই চার কমিশন এবং বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাওয়া যাবে।

সরকারের পক্ষ থেকে আগেই বলা হয়েছে, সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রস্তাবগুলো নিয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। আলোচনার মধ্য দিয়ে যেসব প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্য তৈরি হবে, সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। প্রস্তাবগুলো কবে কোন প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়ন করা হবে, তার একটি রূপরেখা আসতে পারে দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আলোচনার মাধ্যমে।

সুপারিশগুলো নিয়ে কবে নাগাদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে—এই প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আজ চারটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও সুপারিশ হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে হস্তান্তর করা সুপারিশগুলোর মধ্যে কিছু কিছু কনটেন্ট পুনরাবৃত্তিসহ কিছু সংশোধনী থাকায় কমিশনপ্রধানরা আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় চেয়ে নিয়েছেন। আমার ধারণা, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হয়তো আলোচনা শুরু করা যাবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও এক ধরনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। তারা তাদের লিখিত মতামত দিয়েছে।’

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, কমিশন যদি কাজ আগে শেষ করতে পারে, তাহলে হয়তো ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শুরু হতে পারে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ১১ সেপ্টেম্বর নির্বাচনব্যবস্থা, সংবিধান, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। গত ৩ অক্টোবর এই ছয় কমিশনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন ছাড়া অন্য পাঁচটি কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ৬ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় সংবিধান সংস্কার কমিশনের। কমিশনগুলোকে ৯০ দিনের মধ্যে সরকারপ্রধানের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। পরে পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচনব্যবস্থা ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের জন্য আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগের জন্য সময় বাড়ানো হয় আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।

এ ছাড়া রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ এগিয়ে নিতে গত ১৮ নভেম্বর নতুন আরো পাঁচটি সংস্কার কমিশন গঠন চূড়ান্ত করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এগুলো হচ্ছে গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারীবিষয়ক ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। এই পাঁচটি কমিশনকে ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।

গত ১৬ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা অন্তর্বর্তী সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, তা বিবেচনা করে আমি এই কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করব। আমার সঙ্গে এই কমিশনের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। কমিশন প্রয়োজন মনে করলে নতুন সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে। প্রথম ছয় কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আগামী মাসেই (চলতি মাস) জাতীয় ঐকমত্য গঠনে কমিশন কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশা করছি। এই নতুন কমিশনের প্রথম কাজ হবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যেসব সিদ্ধান্ত জরুরি, সেসব বিষয়ে তাড়াতাড়ি ঐকমত্য সৃষ্টি করা এবং সবার সঙ্গে আলোচনা করে কোন সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যায় সে ব্যাপারে পরামর্শ চূড়ান্ত করা।’

গত ৯ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন সংস্কারসাপেক্ষ। এটি প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে এরই মধ্যে দেখেছেন। আমরা আশা করি, সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্ট এ মাসের মধ্যে পাব। প্রথম যে ছয়টি কমিটি হয়েছিল, সেগুলো নির্বাচনসংশ্লিষ্ট। এই কমিশনগুলো যে প্রস্তাব দেবে, সেগুলো নির্বাচনকেন্দ্রিক। প্রস্তাবগুলো নিয়ে আমরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করব। এই প্রক্রিয়ায় প্রবেশের পর রাজনৈতিক দলগুলো আসলে ঠিক করবে কতটা সংস্কার চাই। ওই সংস্কারের মেয়াদ বা পরিধির ভিত্তিতে আমি মনে করি নির্বাচনের তারিখ ঠিক হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর বিষয়টা স্পষ্ট হবে।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com