মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন যে, মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশ গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি হামাসকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ট্রাম্পের এই মন্তব্যে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন এক উত্তেজনা তৈরি হতে পারে।
মঙ্গলবার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম “ট্রুথ সোশ্যাল”-এ এক পোস্টে জানান, মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান মিত্র ও কয়েকটি দেশ তাকে জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা গাজায় ব্যাপক সেনাশক্তি পাঠাতে প্রস্তুত। ট্রাম্প বলেন, এই সিদ্ধান্ত হামাসের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে, বিশেষত যদি তারা শান্তি চুক্তি লঙ্ঘন করে।
তবে, ট্রাম্প কোনো নির্দিষ্ট দেশের নাম উল্লেখ করেননি, যারা এই প্রস্তাব দিয়েছে। তবে তিনি ইন্দোনেশিয়ার সহায়তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, বিশেষ করে দেশটির নেতৃত্বের ভূমিকাকে তিনি প্রশংসা করেছেন। “মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইন্দোনেশিয়া এবং তাদের নেতৃত্ব যেভাবে সহায়তা দিয়েছে, তাতে আমি কৃতজ্ঞ,” বলেন ট্রাম্প।
গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গত ১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েল গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধ করবে। তবে, ইসরায়েল প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যা যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘনের একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প হামাসকে নতুন করে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এমন ভালোবাসা ও উৎসাহ হাজার বছরে দেখা যায়নি। আমি তাদের এবং ইসরায়েলকে বলেছি, ‘এখন নয়!’ তবে, যদি তারা না আসে, হামাসের অবসান হবে দ্রুত, তীব্র ও নির্মমভাবে।”
এদিকে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই হুমকির বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছে, তবে হামাসের শক্তি ভেঙে ফেলা বা তাদের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ বিজয় অর্জন করা এখনও সম্ভব হয়নি।
গাজায় চলমান সামরিক সংঘর্ষের ফলে এক ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি আক্রমণকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। গত দুই বছরে গাজায় ৬৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এবং পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী না পাওয়ায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
এই পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে জাতিসংঘ মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যাতে গাজার ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের সাহায্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়।
ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর, মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদি কিছু দেশ গাজায় সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তা যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। ইতিমধ্যেই গাজায় মানবিক বিপর্যয় ঘটছে, এবং নতুন করে কোনো সামরিক সংঘর্ষ শুরু হলে তা শরণার্থী সংকট এবং মানবিক দুর্দশা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
বাংলাদেশের জন্যও এই পরিস্থিতি বিশেষ গুরুত্বের অধিকারী, কারণ দেশটির মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে গভীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে কোনো নতুন যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা বাংলাদেশে শরণার্থী সংকট এবং মানবিক সংকটের চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
এখন দেখার বিষয় হলো, ট্রাম্পের মন্তব্য এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সম্ভাব্য সেনা পাঠানোর প্রস্তাব কীভাবে পরিস্থিতি পরিবর্তন করবে, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া কী হবে।