জাতীয় ডেস্ক
দাবিকৃত ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা আদায়ের দাবিতে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে অবরুদ্ধ করে রাখেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার পর থেকে তারা সচিবালয়ের ১১ নম্বর ভবনের চতুর্থ তলায় উপদেষ্টার দপ্তরের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন এবং দাবি না মানা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
দুপুরের পর থেকে আসা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নন-ক্যাডার কর্মচারীরা দলবদ্ধভাবে ভবনে প্রবেশ করে চতুর্থ তলায় অবস্থান নেন। তারা ভাতাসহ বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা বাস্তবায়নের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার দিকে কর্মচারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সচিবালয়ের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়।
বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে সচিবালয়ের অর্থ মন্ত্রণালয় গেট এলাকায় দেখা যায়, শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী হাতে হ্যান্ডমাইক নিয়ে দাবি আদায়ের পক্ষে বক্তব্য দিচ্ছেন। তারা অন্যান্য দপ্তরের কর্মচারীদেরও বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। নিরাপত্তাজনিত কারণে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়, যাতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে না ওঠে।
অবরোধে অংশগ্রহণকারী কর্মচারীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা ভাতা, রেশন সুবিধা এবং নতুন পে-স্কেলে আর্থিক সুবিধা কার্যকর করার দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু এসব দাবির উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি দেখতে না পাওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ। তাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় সরকারি আদেশ (জিও) জারি না হওয়ায় কর্মচারীরা আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই তারা ঘোষণা দেন, দাবি পূরণের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত সচিব বা উপদেষ্টাকে দপ্তর ত্যাগ করতে দেওয়া হবে না।
বিক্ষোভকারীদের একাংশ জানান, অতীতেও একই দাবিতে অর্থ উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ করা হয়েছিল। তখন তিনি বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিলেও পরে কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। এতে কর্মচারীদের হতাশা বেড়েছে। তাদের দাবি, রেশন সুবিধা চালু, মহার্ঘ্য ভাতা কার্যকর এবং নতুন পে-কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন—এসব বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। তারা অভিযোগ করেন, নতুন পে-কমিশন গঠিত হলেও বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তা কার্যকর করা হবে না—এমন মন্তব্য উপদেষ্টার তরফ থেকে শুনেছেন, যা কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
মহার্ঘ্য ভাতার বিষয়ে আন্দোলনকারীরা বলেন, দেশের সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতি ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সরকারি চাকরিজীবীদের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে আর্থিক চাপ কমাতে মহার্ঘ্য ভাতা চালু করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকারি ঘোষণায় এ বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। কর্মচারীদের দাবি, আর্থিক সুবিধা না পেলে তাদের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়ছে, যা কর্মক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৃতীয় তলায় জড়ো হওয়া কর্মচারীরা জানান, দাবি বাস্তবায়নে প্রক্রিয়াগত জটিলতা থাকলেও তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত চান। তাদের মতে, দীর্ঘসূত্রতা এবং অস্পষ্ট অবস্থানের কারণেই আজ তারা কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা আরও দাবি করেন, কোনোভাবেই কেবল আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না; বরং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
অবরোধ কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি বাদিউল কবির। তার নেতৃত্বে কর্মচারীরা উপদেষ্টার অফিসের সামনে অবস্থান নেন এবং টানা আন্দোলনের ঘোষণা দেন। সংগঠনের নেতারা বলেন, কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি উপেক্ষিত হওয়ায় এ কর্মসূচি চলছে। দাবি পূরণ হলে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে।
ঘটনার কারণে সচিবালয়ে কর্মচাঞ্চল্য কিছুটা ব্যাহত হয় এবং সংশ্লিষ্ট ভবনে যাতায়াত সীমিত করা হয়। তবে অন্যান্য বিভাগ ও দপ্তরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন সতর্কতা অবলম্বন করে। নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে প্রস্তুত রয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দাবিগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমন্বয় করছে। দাবি বাস্তবায়নে আর্থিক সীমাবদ্ধতা, সরকারি নীতি ও কার্যপ্রক্রিয়া বিবেচনায় নিতে হবে। তবে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে প্রশাসন কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কর্মচারীদের এই অবরোধ কর্মসূচি সচিবালয়ের প্রশাসনিক পরিবেশে নতুন চাপ সৃষ্টি করেছে। দাবি-দাওয়া নিয়ে চলমান অচলাবস্থা সমাধানে সকল পক্ষের সমন্বয় ও সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। দাবি পূরণ বা আলোচনার অগ্রগতি না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছেন।