বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ৮টি রাজনৈতিক দলসহ, পাঁচ দফা দাবিতে সোমবার (২৭ অক্টোবর) দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি পালন করবে। দলটির পক্ষ থেকে সর্বাত্মকভাবে কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামী’র নেতৃবৃন্দ দাবি করেছেন, দলটির আন্দোলনকে শক্তিশালী করার জন্য তাদের ৫টি মূল দাবির প্রতি জনগণের সমর্থন জরুরি।
জামায়াতে ইসলামী এবং তার সহযোগী দলগুলো যে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেছে, তা হলো:
জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন: জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক আদেশ জারি এবং আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে গণভোট আয়োজন করা।
পিআর পদ্ধতির প্রবর্তন: আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে (নিম্ন ও উচ্চ কক্ষে) পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতি চালু করা।
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড: অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য সমান সুযোগ বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা।
ফ্যাসিস্ট সরকারের বিচার: বর্তমান সরকারের গঠনমূলক অপরাধ, গণহত্যা, দুর্নীতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারের প্রক্রিয়া দৃশ্যমান করা।
জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের নিষেধাজ্ঞা: স্বৈরাচারের সমর্থক হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামী’র সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার দেশবাসীর কাছে এই কর্মসূচির সফলতার জন্য সমর্থন কামনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “এই দাবিগুলোর বাস্তবায়ন দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে। আমরা আশা করি, জনগণ আমাদের আন্দোলনে একত্রিত হয়ে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কাজ করবে।”
এ ছাড়াও, তিনি বলেন, “জাতীয় প্রেস ক্লাবে গত ১৯ অক্টোবর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ৫ দফা গণদাবি জাতির সামনে তুলে ধরা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ৩ দিনের চতুর্থ পর্বের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।”
জামায়াতে ইসলামী’র নেতা সবার প্রতি আহ্বান জানান, যে কোন ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি বা বাধা সত্ত্বেও শান্তিপূর্ণভাবে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি সফল করতে হবে। তিনি বলেন, “এ কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের মতামত তুলে ধরতে চাই। দেশজুড়ে জেলার প্রতিটি সেমিনার ও মিছিলের মাধ্যমে আমাদের দাবি ও দাবি আদায়ের জন্য মানুষকে সচেতন করা হবে।”
এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জামায়াতে ইসলামী’র রাজনৈতিক লক্ষ্যও স্পষ্ট হয়েছে, যা শুধু সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নয়, বরং একটি ন্যায়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। দলটি আরও দাবি করেছে যে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দলগুলোকে অবশ্যই একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে।
এদিকে, জামায়াতে ইসলামী’র কর্মসূচি ও দাবির প্রতি জনগণের সমর্থন সংগ্রহ করার পাশাপাশি তাদের লক্ষ্য সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা, যাতে দেশে এক ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলে, বাংলাদেশে একটি নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জামায়াতে ইসলামী’র এই দাবি এবং কর্মসূচি আগামী নির্বাচনের পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। দলটি যদি যথাযথভাবে এই দাবিগুলো আন্দোলনে পরিণত করতে সক্ষম হয়, তবে তা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জামায়াতে ইসলামী’র দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাদের গণদাবি পরবর্তী নির্বাচনের পরিবেশের দিকে ইঙ্গিত করছে, যেখানে দলের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক বাধা সত্ত্বেও জনগণের কাছ থেকে সমর্থন অর্জন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।