বঙ্গোপসাগরে উদ্ভূত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ ক্রমশ ভারতের উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ভারতের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি) জানিয়েছে, গত ছয় ঘণ্টায় দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তার সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল দিয়ে ঘণ্টায় ১৭ কিলোমিটার গতিতে মোন্থা স্থলভাগের দিকে এগোচ্ছে। এটি মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের কাকিনাড়া এবং কলিঙ্গপত্তনম উপকূলের মধ্যবর্তী অংশে আছড়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আইএমডি বুলেটিনের তথ্যানুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে’ পরিণত হয়ে মঙ্গলবার সকালের মধ্যে আঘাত হানবে। অন্ধ্র প্রদেশের মছলিপত্তনম ও কাকিনাড়া উপকূলে বাতাসের গতি ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা হতে পারে, এবং দমকা বাতাসের গতি ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাবে ভারতীয় উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ব্যাপক সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অন্ধ্র প্রদেশ, তামিলনাড়ু, এবং ওড়িশা রাজ্যের উপকূলীয় এলাকায় জরুরি সতর্কতা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই অঞ্চলের উপকূল থেকে বহু মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, অন্ধ্র প্রদেশের মছলিপত্তনম এবং কলিঙ্গপত্তনমের মধ্যবর্তী উপকূলীয় এলাকায় স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে এবং বেশ কিছু ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।
অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জানিয়েছেন, রাজ্যে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে রাজ্য সরকার হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে এবং কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। অন্ধ্র প্রদেশের কিছু অঞ্চলে স্কুলের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
তামিলনাড়ুতে ঝড়-বৃষ্টির প্রভাব ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। রাজধানী চেন্নাইসহ রাজ্যের বেশ কিছু এলাকায় ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন জানিয়েছেন, তার সরকার ঝড় ও বৃষ্টির কারণে যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।
এছাড়া, তেলেঙ্গানা এবং কর্নাটক রাজ্যের উপকূলীয় অঞ্চলেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। তেলেঙ্গানার পেডাপল্লি এবং আদিলাবাদসহ কয়েকটি জেলায় ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে, এবং কর্নাটকের উদুপি, উত্তর ও দক্ষিণ কন্নড় জেলায়ও বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় রেলওয়ে দপ্তর দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলীয় শাখায় বেশ কিছু ট্রেন বাতিল করেছে এবং কিছু ট্রেনের সময়সূচী পরিবর্তন করেছে। বিশেষত অন্ধ্র প্রদেশের বিশাখাপত্তনম এলাকায় ট্রেন পরিষেবা কিছুটা বিঘ্নিত হতে পারে। বিমান পরিষেবা সংস্থা ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সও সাবধানতা হিসেবে কয়েকটি ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে।
ওড়িশার গজপতি জেলায় গতকাল রাত থেকেই ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে এবং উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার এই অঞ্চলের আটটি জেলায় উদ্ধারকারী দল মোতায়েন করেছে এবং সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলগুলো থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
এখনও পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির কারণে অঞ্চলটির বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে এবং সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন তৎপর রয়েছে।
আইএমডি জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ ভারতীয় উপকূলে প্রবেশের পর আগামী পাঁচ দিন ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। অন্ধ্র প্রদেশ, তামিলনাড়ু এবং ওড়িশা রাজ্যে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে, বিশেষত উপকূলীয় অঞ্চলে। তাই সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোর বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সামগ্রিকভাবে, মোন্থার প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টিপাত এবং দুর্বল অবকাঠামোগত স্থিতিশীলতার কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে বিপদসীমা পেরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরিবহন ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ বাধা সৃষ্টি হতে পারে, যা বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।