জাতীয় ডেস্ক
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ওপর ‘আগামী বাংলাদেশের বিনির্মাণের দায়িত্ব’ এসে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, “ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কেমন হবে—গণতান্ত্রিক না অন্য কোনো পথে যাবে—তা অনেকাংশে নির্ভর করবে নির্বাচন পরিচালনায় সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীলতার ওপর।”
সোমবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর ভাটারায় আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন (এজিবি) প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর থানা আনসার কোম্পানি ও প্লাটুন সদস্যদের আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণের চতুর্থ ধাপের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সিইসি বলেন, “ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আনসার বাহিনীর সদস্যরাই মূল ভূমিকা পালন করেন। তাদের সংখ্যাই মাঠপর্যায়ে সবচেয়ে বেশি। তাই আগামী নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আনসার সদস্যদের ভূমিকা দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের যে গতিপথ নির্ধারণ হবে, সেখানে আনসার বাহিনীর বিশাল অবদান থাকবে। দায়িত্বে থাকা প্রত্যেক সদস্যকে সততা, শৃঙ্খলা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।”
এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় দশ লাখ ব্যক্তি সরাসরি নির্বাচনী দায়িত্বে থাকবেন। এর মধ্যে প্রিজাইডিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন।
তিনি বলেন, “যারা নির্বাচনের দায়িত্বে থাকেন, তারা নিজেরাই সাধারণত ভোট দিতে পারেন না। এবার আমরা এমন ব্যবস্থা নিয়েছি যাতে তারা ভোট দিতে পারেন। এ জন্য একটি বিশেষ অ্যাপ চালু করা হবে। দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা সেই অ্যাপে নিবন্ধন করলে তাদের ঠিকানায় ব্যালট পৌঁছে যাবে এবং নির্ধারিত গাইডলাইন অনুযায়ী তারা ভোট দিতে পারবেন।”
সিইসি জানান, আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিরাও বাংলাদেশের নাগরিক। তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে এবার বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “যারা কারাগারে রয়েছেন, তারাও যেন ভোট দিতে পারেন, সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। পাশাপাশি প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার সুযোগও এবার বাস্তবায়িত হচ্ছে।”
নাসির উদ্দিন বলেন, “আমি এই দায়িত্বকে কেবল চাকরি হিসেবে নিচ্ছি না, এটিকে একটি জাতীয় মিশন হিসেবে গ্রহণ করেছি। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কেমন বাংলাদেশ রেখে যাব, সেটাই আমাকে সারাক্ষণ ভাবায়। আমি গতানুগতিক ধারার কাজে বিশ্বাসী নই। সংকটময় এই সময়ের প্রেক্ষাপটে দায়িত্ব পালনে আমাদের ‘আউট অব দ্য ওয়ে’ গিয়ে কাজ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আসন্ন নির্বাচন কেবল ভোটগ্রহণের প্রক্রিয়া নয়, এটি একটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ও জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সুযোগ। তাই দায়িত্বপ্রাপ্ত সবাইকে সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করতে হবে।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব প্রতিরোধে সচেতনতার আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, “সত্যতা যাচাই না করে কোনো তথ্য শেয়ার করবেন না। নির্বাচন কমিশনে একটি যাচাই সেল চালু করা হয়েছে, যেখানে যোগাযোগ করে তথ্যের সত্য-মিথ্যা যাচাই করা যাবে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের উচিত এই সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া।”
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রশিক্ষণার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। সিইসি প্রশিক্ষণ সমাপ্তি শেষে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে সনদ প্রদান করেন এবং দায়িত্ব পালনে পেশাদারিত্ব ও সততার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।