জাতীয় ডেস্ক
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আজ রবিবার সকালে গণফোরামসহ ছয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসে। সংলাপ আয়োজনের শুরুতেই ইসলামী ঐক্যজোটের দুটি পৃথক পক্ষ উপস্থিত হওয়ায় সভাকক্ষে উত্তেজনা ও সাময়িক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ যেসব প্রতিনিধির কাছে ইসির পাঠানো আমন্ত্রণপত্র নেই, তাদের সম্মেলন কক্ষ ত্যাগের অনুরোধ জানান।
সংলাপের নির্ধারিত সময়ের আগে সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত হন ইসলামী ঐক্যজোটের এক পক্ষের যুগ্ম মহাসচিব দাবি করা মইনুদ্দিন রুহি এবং আরও দুই সদস্য। তারা চেয়ারে বসে সংলাপ শুরুর অপেক্ষায় থাকাকালে দলটির আরেক পক্ষের প্রতিনিধি দল, মাওলানা জোবায়েরের নেতৃত্বে, সভাকক্ষে প্রবেশ করেন। এই প্রতিনিধিদলের কাছে ইসি পাঠানো আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র ছিল। এতে প্রতিনিধিত্ব নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয় এবং দুই পক্ষের মধ্যে মৌখিক তর্কাতর্কি শুরু হয়। উপস্থিত নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা উভয় পক্ষকে সংযত করার চেষ্টা করলেও সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য একটি অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়।
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ পরিস্থিতি লক্ষ করে সভাকক্ষে ঘোষণা দেন যে, শুধুমাত্র যেসব প্রতিনিধির কাছে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র রয়েছে, তাদের সঙ্গেই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। তিনি অনুরোধ করেন, যাদের কাছে চিঠি নেই তারা যেন স্বেচ্ছায় সম্মেলন কক্ষ থেকে বের হয়ে যান। তাঁর এই আহ্বানের পর মইনুদ্দিন রুহির নেতৃত্বাধীন পক্ষটি বাইরে চলে যায়।
সম্মেলন কক্ষ ত্যাগের সময় মইনুদ্দিন রুহি অভিযোগ করেন যে, তাদের দলীয় আমন্ত্রণপত্র নানাভাবে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করে বাতিল বা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান তাদের পক্ষকে দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধি হিসেবে নির্ধারণ করে প্যাডে স্বাক্ষরিত চিঠি দিয়েছেন এবং সেই প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ বৈধ। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, ডাকযোগে পাঠানো আমন্ত্রণপত্র যে কারও কাছে পৌঁছাতে পারে, ফলে কার হাতে আমন্ত্রণপত্র পাওয়া গেল তার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণ করা যৌক্তিক নয়। রুহি বলেন, শুধুমাত্র যার হাতে আমন্ত্রণপত্র পাওয়া গেল সে-ই যে দলের বৈধ প্রতিনিধি—এমন সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ।
দলটির আরেক পক্ষের প্রতিনিধিদল সভাকক্ষে থেকে যাওয়ায় সংলাপ প্রক্রিয়া পুনরায় স্বাভাবিক হয়। ইসি সচিব আখতার আহমেদ এই পরিস্থিতি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সংলাপের শুরুতেই অসামঞ্জস্যতার ঘটনার জন্য তিনি আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত। একই সঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, “তিতা দিয়ে শুরু করলে নাকি ভালো হয়”—যা দিয়ে তিনি পরিস্থিতির প্রতি একরকম বাস্তবিক স্বীকৃতি প্রদান করেন।
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ সাধারণত নির্বাচন প্রস্তুতি, আচরণবিধি, ভোটগ্রহণের পরিবেশ এবং পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে মতবিনিময়ের উদ্দেশ্যে আয়োজন করা হয়। এবারও একই প্রেক্ষাপটে ইসি ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে সমন্বয়, ভোটগ্রহণের সুশৃঙ্খল পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনসংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের মতামত শোনাই এসব সংলাপের মূল উদ্দেশ্য। বিশেষ করে নির্বাচনকে ঘিরে দেশে যাতে সংঘাতমুখর পরিবেশ সৃষ্টি না হয় এবং রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত দলগুলোর অবস্থান স্পষ্ট থাকে—সেসব বিবেচনাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ইসলামী ঐক্যজোটের দুই পক্ষের মধ্যে প্রতিনিধিত্ব নিয়ে এমন বিরোধ দলটির অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে আরও স্পষ্টভাবে সামনে নিয়ে এসেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানান রাজনৈতিক দলের ভেতরকার টানাপোড়েন প্রকাশ্যে আসায় ইসি পরিচালিত সংলাপের মাধ্যমে কোন পক্ষগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনায় অংশ নেবে, তা নিশ্চিত করা কমিশনের জন্য একটি প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়।
এ ধরনের বিভক্তি নির্বাচনপূর্ব রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জটিলতা বাড়াতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। একটি দল থেকে একাধিক অংশ নিজেকে বৈধ বলে দাবি করলে ইসিকে আনুষ্ঠানিক কাগজপত্র যাচাই করে গ্রহণযোগ্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হয়। নির্বাচনী প্রস্তুতির এই পর্যায়ে দলগুলোর অভ্যন্তরীণ ঐক্য এবং নেতৃত্বের স্বচ্ছতা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়।
আজকের সংলাপে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি নির্বাচনী পরিবেশে রাজনৈতিক দলের অবস্থান, অভ্যন্তরীণ কাঠামো এবং নেতৃত্বের প্রশ্নে নতুন করে নানা আলোচনার জন্ম দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দলের ভেতরের বিভাজন বা দ্বন্দ্ব ভোটারদের সামনে একটি আলাদা বার্তা বহন করতে পারে—যা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে ভূমিকা রাখতে পারে।
ইসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি ও কার্যক্রম নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যাবে।