জেলা প্রতিনিধি
খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালত চত্বরে রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে একসঙ্গে দুইজন ব্যক্তি গুলি ও ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে দুজনই গুরুতর আহত অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান। এই ঘটনায় এলাকায় তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পুলিশ ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে। খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম ঘটনাটি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা যায়, নিহতরা—নতুন বাজার এলাকার মান্নান হাওলাদারের ছেলে হাসিব হাওলাদার এবং অপরজন রাজন—আদালতের হাজিরার জন্য উপস্থিত ছিলেন। তারা আদালতের ফটকের পাশে মোটরসাইকেল রেখে চা পান করছিলেন। এ সময় চার থেকে পাঁচজন দূর্বৃত্ত হেঁটে এসে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।
গোলাগুলি ছোঁড়ার পর আহতরা মাটিতে পড়লে হামলাকারীরা চাপাতি ব্যবহার করে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তাদের জখম করে। হামলাকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় আহতদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসকরা আহতদের মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের পরিবারের তথ্য অনুযায়ী, হাসিব হাওলাদারের বিরুদ্ধে কিছুদিন আগে একটি অস্ত্র মামলার অভিযোগ ছিল। মামলার প্রক্রিয়ায় হাজিরা দিতে আদালতে আসার সময় এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। নিহত হাসিবের ভাই শাকিল হাওলাদার বলেন, “আমাদের ভাই আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন। কোনও পূর্বশত্রুতার কারণে বা মামলার সম্পর্কেই হামলা হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।”
পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজনদের খুঁজে বের করতে তদন্ত শুরু করেছে। শফিকুল ইসলাম জানান, সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী অভিযান চলমান রয়েছে। এছাড়া, স্থানীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং আদালতের পারিপার্শ্বিক এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে খুলনা জেলা পুলিশ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সতর্কতা অবলম্বন করছে। স্থানীয় প্রশাসনও এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত এবং দোষীদের গ্রেপ্তারের ওপর জোর দিয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, হামলাটি পূর্বপরিকল্পিত এবং ব্যক্তিগত শত্রুতা বা মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।
খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের চারপাশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই কঠোর করা হয়েছে। এছাড়া, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ হাসপাতাল ও আদালতের আশপাশে নিরাপত্তা তদারকি বৃদ্ধি করেছে যাতে পরবর্তী হামলার ঘটনা রোধ করা যায়।
স্থানীয় আইনজীবী ও আদালতের কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা বিচারপ্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ণ করতে পারে। তাই ঘটনার দ্রুত বিচার এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশের ধারা অনুযায়ী, তদন্ত শেষ হওয়ার পর ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সাংবাদিকদের জানানো হবে।
এই ঘটনায় খুলনা মহানগর জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতদের পরিবারের পাশে স্থানীয় সমাজ ও প্রতিবেশীরা দাঁড়িয়েছেন। পুলিশের তৎপরতায় আশা করা হচ্ছে, হামলাকারীদের দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।