জাতীয় ডেস্ক
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রবাসীদের জন্য চালু করা আইটি-সমর্থিত ডাকভোট ব্যবস্থায় নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন ২ লাখ ৪৯ হাজার ৩৩৮ জন প্রবাসী বাংলাদেশি। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, নিবন্ধনকারীদের মধ্যে ২ লাখ ২৮ হাজার ১৪৭ জন পুরুষ এবং ২১ হাজার ১৯১ জন নারী। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধনকারীদের ঠিকানায় ডাকযোগে ব্যালট পেপার পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে সোমবার সকাল ৯টা ১০ মিনিট পর্যন্ত হালনাগাদ করা তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসীদের জন্য চালু করা ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয় গত ১৯ নভেম্বর। এই কার্যক্রম চলবে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। নিবন্ধনসমাপ্ত প্রবাসী ভোটারদের ডাকযোগে ব্যালট পাঠানোর পর তারা ভোট দিয়ে নির্দিষ্ট ফিরতি খামে তা সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করবেন।
এটি দেশে প্রথমবারের মতো বড় পরিসরে প্রবাসীদের ডাকভোট নিশ্চিত করার উদ্যোগ। এর আওতায় প্রবাসী, আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তি এবং ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিতরা অ্যাপ-ভিত্তিক নিবন্ধন সম্পন্ন করে এই পদ্ধতিতে ভোট দিতে পারবেন। কমিশন জানিয়েছে, ডাকভোটের ক্ষেত্রে ভোট গ্রহণ ও প্রেরণের নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিরাপদ ব্যবস্থা বজায় রাখা হবে, যাতে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়।
প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন যে দেশগুলোতে চলছে, সেগুলোর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, মিসর, মোজাম্বিক, লিবিয়া, মরিশাস, হংকং, ব্রাজিল, উগান্ডা, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, লাইবেরিয়া, বতসোয়ানা, কেনিয়া, রুয়ান্ডা, আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, তানজানিয়া, সোমালিয়া, ঘানা, গিনি, মরক্কো, দক্ষিণ সুদান, চিলি, সিয়েরা লিওন, ইকুয়েডর, তাইওয়ান, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, গাম্বিয়া, পেরু, জিম্বাবুয়ে, যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশ। এসব দেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের জন্য নির্দিষ্ট নির্দেশনা অনুসারে অ্যাপে নিবন্ধনের সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন অভ্যন্তরীণ ও প্রবাসী উভয় শ্রেণির ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংস্থাটি প্রবাসী ভোটারদের লক্ষ্য করে প্রায় ৫০ লাখ ভোট টানার উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের নিবন্ধন সহজ করতে প্রযুক্তিভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে দূরবর্তী অঞ্চল বা সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে ভোটাধিকার প্রয়োগে কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকে।
ইসি জানিয়েছে, ডাকভোটে ভোট গ্রহণ একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া হলেও নিরাপদ ডাকব্যবস্থা ও নিবন্ধনকৃত ভোটারের তথ্য যাচাই করে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। ব্যালট পেপার পাঠানোর পর ভোটারদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা প্রেরণ করতে হবে, যাতে নির্বাচনের পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী গণনা সম্পন্ন করা যায়।
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে প্রবাসী ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হলে বিদেশে বসবাসকারী নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ আরও সুসংহত হবে বলে নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক নথিতে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
প্রবাসীদের ডাকভোট পদ্ধতি নতুন হওয়ায় ভোটগ্রহণের প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক কাজ—ব্যালট পাঠানো, ফেরত ব্যালট গ্রহণ, যাচাই-বাছাই এবং চূড়ান্ত গণনার জন্য নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বিদেশস্থ দূতাবাসগুলোর সঙ্গে সমন্বয় জোরদার করেছে। পদ্ধতিটির সুষ্ঠু বাস্তবায়ন দীর্ঘমেয়াদে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার প্রয়োগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে বলে প্রশাসনিক প্রস্তুতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করছে সংস্থাটি।