জাতীয় ডেস্ক
কেরানীগঞ্জে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রগুলোর বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আজ সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। নির্ধারিত সময় ধরে রক্ষণাবেক্ষণ কাজ পরিচালনার কারণে এসব এলাকায় সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রাখা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুসারে, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উত্তর পানগাঁও, দক্ষিণ পানগাঁও, জাজিরা, কাজিরগাঁও, দক্ষিণ বাগৈর, কান্দাপাড়া, আইন্তা কাউটাইল, ব্রাক্ষণগাঁও এবং বসুন্ধরা এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে উপকেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম পরীক্ষা, লাইন রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং জরুরি সংস্কার কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম বিদ্যুৎ অবকাঠামো সচল রাখা এবং সার্বিক বিদ্যুৎ সেবার স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রতিটি উপকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি নির্দিষ্ট সময় পরপর পরীক্ষার মাধ্যমে সম্ভাব্য ত্রুটি শনাক্ত করা হয়। এসব কাজ সম্পন্ন না হলে হঠাৎ প্রযুক্তিগত ত্রুটি, লোডের চাপ বৃদ্ধি বা বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে এই রক্ষণাবেক্ষণ অত্যাবশ্যক।
কেরানীগঞ্জের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা রাজধানীর দক্ষিণাংশ এবং পার্শ্ববর্তী শিল্পঘন এলাকার সঙ্গে সংযুক্ত। তাই এসব অঞ্চলে স্থিতিশীল বিদ্যুৎ প্রবাহ বজায় রাখা স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রক্ষণাবেক্ষণের সময়সীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সাধারণত এমন সময় বেছে নেয় যখন দৈনন্দিন কার্যক্রমে ব্যাঘাত কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে দিনের বেলায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে গৃহস্থালি কাজ, ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রমে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।
অন্যদিকে, রক্ষণাবেক্ষণজনিত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার বিষয়ে আগাম তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে স্থানীয়দের প্রস্তুতি গ্রহণ সহজ হয়। সাধারণত এই ধরনের কার্যক্রমের আগে বাসিন্দাদের ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম বন্ধ রাখা, বিকল্প আলোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনীয় কাজে আগে থেকে পরিকল্পনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে চিকিৎসাসেবা, পানির পাম্প এবং সংরক্ষণাগারসহ যেসব স্থানে বিদ্যুৎ অপরিহার্য, সেখানে জেনারেটর বা অন্যান্য ব্যাকআপ ব্যবস্থার প্রস্তুতিও গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থায় আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম একটি মৌলিক উপাদান। এ ধরনের কাজের মাধ্যমে গ্রিড ব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়ে, সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা কমে এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পায়। একই সঙ্গে চাহিদা বৃদ্ধির চাপ মোকাবিলায় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোর কার্যক্ষমতাও উন্নত হয়।
কেরানীগঞ্জ এলাকায় দ্রুত নগরায়ণ, নতুন শিল্প স্থাপনা এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। তাই ভবিষ্যতে এসব অঞ্চলে আরও সুশৃঙ্খল বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করতে নতুন লাইন স্থাপন, পুরোনো অবকাঠামো সংস্কার এবং প্রযুক্তি উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ এই বৃহৎ কাঠামোর একটি অংশমাত্র; নিয়মিত তদারকি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে গ্রাহকসেবার মান আরও উন্নত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
এদিকে, আজকের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণ কাজ সম্পন্ন করতে পর্যাপ্ত কর্মী ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট এলাকায় ধাপে ধাপে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হবে। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি বা অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আলাদাভাবে তা জানাবে।
রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হলে বিদ্যুৎ সরবরাহের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি, ত্রুটিজনিত বিঘ্ন কমে আসা এবং সাধারণ গ্রাহকের ভোগান্তি হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভবিষ্যতে বড় ধরনের মেরামত বা হঠাৎ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঝুঁকিও কমবে।
সংশ্লিষ্ট সংস্থা জানিয়েছে, রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে গ্রাহকদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে প্রয়োজনীয় কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হলে তাৎক্ষণিকভাবে তা গ্রাহকদের জানানো হবে।