জাতীয় ডেস্ক
কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে পূর্বে নথিভুক্ত দমন-পীড়ন ও সহিংসতার অভিযোগের প্রেক্ষাপটে দলটিকে নিয়ে জনপ্রিয়তা জরিপ পরিচালনার নৈতিকতা ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বুধবার, ১০ ডিসেম্বর তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক স্ট্যাটাসে এ ধরনের জরিপের উদ্দেশ্য, প্রভাব এবং সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে মন্তব্য করেন।
স্ট্যাটাসে তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্লেষকদের মতে নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের বিষয়ে জনসমর্থন যাচাইয়ের নামে পরিচালিত জরিপ কোনোভাবেই নিরপেক্ষ গবেষণার অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং এটি অতীতের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে আড়াল করার প্রচেষ্টা হিসেবে ব্যবহার হতে পারে। তার মতে, যে কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে নথিভুক্ত দমন-পীড়ন বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকলে সেসব ঘটনার জবাবদিহি নিশ্চিত করাই হওয়া উচিত অগ্রাধিকার; জনপ্রিয়তা জরিপে সেই দায় খণ্ডিত হয় না।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, দেশের রাজনীতিতে সহিংসতা ও ভয়ভিত্তিক পরিস্থিতি দীর্ঘ সময় ধরে প্রভাব বিস্তার করেছে। তার বক্তব্য অনুযায়ী, টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছিল, যার মধ্যে বিরোধী পক্ষের ওপর হামলা, সমাবেশে বাধা, সড়কে অবরোধ এবং আগ্নেয়াস্ত্রের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার সাধারণ ঘটনা হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সহিংস পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় বলে তিনি দাবি করেন।
স্ট্যাটাসে তিনি আরও বলেন, একটি রাজনৈতিক সরকারের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতার ভিত্তি হিসেবে ভয়কে ব্যবহার করা হলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত জুলাই ও আগস্ট মাসে আন্দোলন দমনের প্রচেষ্টা সফল হলে তৎকালীন সরকার আরও দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার সুযোগ পেতে পারত— এমন সম্ভাবনাও তিনি বিশ্লেষকদের বক্তব্য উদ্ধৃত করে উল্লেখ করেন। তবে নতুন প্রজন্ম ভয়কে পরোয়া না করে প্রতিবাদে অংশ নেওয়ায় সরকার শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারে যে গণহত্যা বা দমন-পীড়নের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব নয়।
শফিকুল আলম প্রশ্ন তোলেন, জনমত জরিপ কি ইতিহাসের নথিভুক্ত ঘটনা পরিবর্তন করতে পারে বা অতীতের মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়কে প্রভাবিত করতে সক্ষম? তার মতে, জরিপে ১০ শতাংশ বা ২০ শতাংশ সমর্থন পাওয়ার মতো তথ্য রাজনৈতিক বাস্তবতা ব্যাখ্যা করার জন্য যথেষ্ট নয়, বিশেষত যখন অতীতের গুরুতর অভিযোগ এখনো পর্যালোচনার অপেক্ষায় রয়েছে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক আন্দোলনে নিহত তরুণদের স্মৃতি এখনও তাজা, এবং এমন পরিস্থিতিতে বিতর্কিত রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের উদ্যোগ শহিদদের প্রতি অবমাননার সামিল হতে পারে। দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহি, যা ছাড়া ভবিষ্যতে কোনো ধরনের রাজনৈতিক জরিপ বা মূল্যায়ন অর্থবহ হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
স্ট্যাটাসে তিনি ধারণা ব্যক্ত করেন যে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ক্ষেত্র পুনর্গঠন ও নীতিনির্ধারণে বিভিন্ন জরিপ সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। তবে তার আগে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর অতীত পর্যালোচনার জন্য স্বাধীন তদন্ত, প্রমাণ নির্ভর বিচারিক প্রক্রিয়া এবং সত্য প্রকাশের প্রয়োজনীয়তাকে তিনি গুরুত্ব দেন। তার মতে, জবাবদিহিহীন কোনো প্রক্রিয়া রাজনৈতিক বাস্তবতা স্বাভাবিকীকরণে বাধা সৃষ্টি করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে গণতান্ত্রিক বিকাশকেও ব্যাহত করবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বর্তমানে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এবং এ সময়ে অতীতের সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কিত অভিযোগগুলো স্পষ্টভাবে পর্যালোচনা করা জরুরি। ন্যায়বিচার নিশ্চিত না করে রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা বা জনমত যাচাইয়ের মতো উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে তা ভুল বার্তা দেবে এবং সামাজিক আস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সামগ্রিকভাবে, তার বক্তব্যে দৃষ্টিগোচর হয় যে রাজনৈতিক সহিংসতা, দমন-পীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুতর অভিযোগগুলোর ক্ষেত্রে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা ছাড়া জনপ্রিয়তা জরিপ পরিচালনা রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক নৈতিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।