জাতীয় ডেস্ক
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে দায়িত্ব পালনকারী ছাত্র প্রতিনিধি ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন; তবে পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চলমান কর্মসূচি, সাম্প্রতিক সংস্কার কার্যক্রম ও উন্নয়ন উদ্যোগের বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি জানান, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও প্রযুক্তিনির্ভর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল রেকর্ড ব্যবস্থাপনা, সেবা কেন্দ্র সম্প্রসারণ, পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন কর্মসূচি এবং জনসেবায় স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য নতুন বিধি-বিধান প্রণয়নের উদ্যোগ।
সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্ন গ্রহণ করেন। এ সময় এক সাংবাদিক নির্বাচনে অংশ নেওয়া ও উপদেষ্টা পদ ছাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আসিফ মাহমুদ বলেন, তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। তবে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে তার পদত্যাগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকেই দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, কোন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন তিনি নেবেন, তা পরে জানানো হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে উপদেষ্টা পরিষদের দুই সদস্য নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার আগে পদত্যাগ করতে পারেন—এমন আলোচনা চলছিল। বিশেষ করে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে দু’জন উপদেষ্টার অংশগ্রহণ জনমনে কৌতূহল তৈরি করেছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আসিফ মাহমুদের সংবাদ সম্মেলনকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার ঘোষণার মধ্য দিয়ে ধারণা করা হচ্ছে, উপদেষ্টা পরিষদের গঠন এবং এর স্থায়িত্ব নিয়ে জনমনে যে জল্পনা ছিল, তা আরও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।
নির্বাচন কমিশন আজ সন্ধ্যা বা আগামীকাল বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে বলে জানা গেছে। সম্ভাব্য তফসিল ঘোষণার আগ মুহূর্তে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নির্বাচনমুখী সিদ্ধান্ত নির্বাচনপদ্ধতির স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছে। কারণ অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীল পদে থেকে নির্বাচন অংশগ্রহণ সম্ভাব্য স্বার্থসংঘাতের বিষয় তৈরি করতে পারে। এ কারণে উপদেষ্টাদের পদত্যাগ এবং তাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ বিষয়ে স্পষ্টতা চাওয়া হচ্ছিল।
এদিকে উপদেষ্টাদের মধ্যে অন্য ছাত্র প্রতিনিধি, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকেও পদত্যাগ করতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে। তবে তার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। মন্ত্রণালয়েরও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ফলে উপদেষ্টা পরিষদের দুই ছাত্র প্রতিনিধি একই সময়ে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে নতুন প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। বিশেষ করে নির্বাচনপূর্ব সময়ে তারা প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং নীতিগত দিকনির্দেশনা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এমন অবস্থায় তাদের মধ্যে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে পদত্যাগ অপরিহার্য হয়ে ওঠে, যাতে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনো সন্দেহ সৃষ্টি না হয়। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট মহলেও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, উপদেষ্টাদের সম্ভাব্য পদত্যাগ অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামোতে সাময়িক পরিবর্তন আনতে পারে। একই সঙ্গে নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ বা বিদ্যমান দায়িত্ব বণ্টনে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হতে পারে। তাছাড়া ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত তরুণ নেতৃত্বের নির্বাচনমুখী হওয়া তরুণদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং নেতৃত্ব বিকাশে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে আসিফ মাহমুদ নির্বাচন অংশগ্রহণের কারণ ও লক্ষ্য সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু না বললেও তার বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছে। এখন প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে তার পদত্যাগ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এবং তিনি কোন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন নেবেন—সেটি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক, প্রশাসন ও নাগরিক সমাজের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার প্রাক্কালে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের এই অবস্থান চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।