জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষীর নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেছেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবদান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অত্যন্ত প্রশংসিত এবং বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা ধারাবাহিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।
মঙ্গলবার প্রকাশিত এক শোকবার্তায় নৌপরিবহন উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন। শোকবার্তায় তিনি সুদানে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের আত্মত্যাগকে জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করেন এবং নিহতদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে তিনি হামলার ঘটনায় গুরুতর আহত আটজন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় সংঘটিত একটি নৃশংস ও অনাকাঙ্ক্ষিত হামলায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন সদস্য নিহত হন। এ ঘটনায় আরও আটজন শান্তিরক্ষী মারাত্মকভাবে আহত হন। হামলার সময় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা জাতিসংঘের অধীনে শান্তিরক্ষা ও নিরাপত্তা কার্যক্রমে নিয়োজিত ছিলেন। ঘটনার পরপরই আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং পরিস্থিতি পর্যালোচনায় জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করে।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা তাঁর শোকবার্তায় বলেন, বিশ্ব শান্তি ও মানবতার সেবায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা দীর্ঘদিন ধরে সাহস, পেশাদারিত্ব ও আত্মনিবেদনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আসছেন। সুদানে কর্তব্যরত অবস্থায় তাঁদের প্রাণদান কেবল একটি মিশনের ক্ষতি নয়, বরং আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে এক গুরুতর ধাক্কা। তিনি এই হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এমন সহিংসতা শান্তি প্রতিষ্ঠার পথকে আরও জটিল করে তোলে বলে উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী অন্যতম বৃহৎ দেশ হিসেবে পরিচিত। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁদের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে সংঘাতপূর্ণ এলাকায় বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অস্ত্রবিরতি পর্যবেক্ষণ, মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে সহায়তা এবং স্থানীয় প্রশাসনকে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা করা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের পেশাদার আচরণ ও শৃঙ্খলার জন্য বারবার প্রশংসা করা হয়েছে।
সুদান দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সশস্ত্র সংঘাতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা এবং সহিংসতার কারণে শান্তিরক্ষা মিশনের দায়িত্ব পালন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আবেই অঞ্চলটি বিশেষভাবে সংবেদনশীল এলাকা হিসেবে পরিচিত, যেখানে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। এই প্রেক্ষাপটে শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলার ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা শোকবার্তায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি সুদানে চলমান সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্ট দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি যৌথ দায়িত্ব। শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সহিংসতার পথ পরিহার করে সংলাপ ও সহযোগিতার মাধ্যমে সংকট সমাধানের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
হামলার ঘটনায় নিহত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের মরদেহ দেশে ফেরানো, তাঁদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন এবং আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও দায়ীদের জবাবদিহির বিষয়টি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনায় এসেছে।
বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের ধারাবাহিক অংশগ্রহণ ও ত্যাগ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় দেশের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করেছে। সুদানে নিহত শান্তিরক্ষীদের আত্মত্যাগ সেই ভূমিকারই আরেকটি মর্মান্তিক কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।