নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাংবাদিক আনিস আলমগীর, অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, মডেল মারিয়া কিসপোট্টা ও অভিনেতা ইমতু রাতিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র, নিষিদ্ধ সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রপাগান্ডা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উসকানির অভিযোগ আনা হয়েছে।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্সের কেন্দ্রীয় সংগঠক আরিয়ান আহমেদ উত্তরা পশ্চিম থানায় এ অভিযোগ দায়ের করেন। সংশ্লিষ্ট থানা সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগটি সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ধারায় গ্রহণ করা হয়েছে এবং প্রাথমিক যাচাই-বাছাই চলছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করলেও তার অনুসারীরা বিভিন্ন কৌশলে দেশে অবস্থান করে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষ্যে ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগে দাবি করা হয়, এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বক্তব্য ও প্রচারণা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত।
অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে অভিযুক্তরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং বিভিন্ন টেলিভিশন টক শোতে অংশ নিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনকে পুনরায় সক্রিয় করার পক্ষে বক্তব্য ও প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। অভিযোগকারীর ভাষ্য অনুযায়ী, এসব বক্তব্যের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক দলের পুনর্বাসনের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে, যা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্তদের প্রকাশিত পোস্ট, মন্তব্য ও বক্তব্যের ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কিছু কর্মী অনুপ্রাণিত হয়ে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে। এতে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করা, সরকারি ও বেসরকারি অবকাঠামোতে হামলা এবং সন্ত্রাসী তৎপরতার মাধ্যমে ভীতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগে দাবি করা হয়েছে।
থানা সূত্র জানায়, অভিযোগে উত্থাপিত বিষয়গুলো সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ডিজিটাল যোগাযোগমাধ্যমে অপরাধ সংক্রান্ত বিধান এবং রাষ্ট্রদ্রোহসংক্রান্ত আইনের আলোকে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অভিযোগ গ্রহণের পর সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো প্রমাণাদি সংগ্রহ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত কনটেন্ট বিশ্লেষণ এবং অভিযুক্তদের বক্তব্যের আইনগত মূল্যায়ন শুরু করেছে।
এদিকে রোববার রাতে সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়। ডিবি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, অভিযোগের প্রাথমিক তথ্য যাচাই ও সংশ্লিষ্ট বক্তব্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা জানার জন্য তাকে ডাকা হয়েছে। এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
অন্য অভিযুক্তদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রয়োজন অনুযায়ী তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। তবে এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
আইনজ্ঞদের মতে, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অভিযোগ দায়েরের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র, উসকানি বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতার সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা গুরুত্বপূর্ণ। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, আর অভিযোগ প্রমাণিত না হলে সংশ্লিষ্টদের আইনগত সুরক্ষা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, চলমান তদন্তের অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে মামলার ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে। এ ঘটনায় রাজনৈতিক, সামাজিক ও গণমাধ্যম অঙ্গনে আলোচনার সৃষ্টি হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।