নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে একটি অনুকূল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিবেশ বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পেশাদারিত্বের সঙ্গে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে এবং নির্বাচন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া এখন কার্যকর পর্যায়ে রয়েছে।
বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে উপদেষ্টা পরিষদের অর্থনৈতিক বিষয়ক কমিটি এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির পৃথক দুটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং নির্বাচন সংক্রান্ত ব্যয় বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন অর্থ উপদেষ্টা।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও হালনাগাদ করেছে এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। এসব কার্যক্রম নির্বাচন আয়োজনের মৌলিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। তাঁর ভাষায়, এখন মূল চ্যালেঞ্জ হলো ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন কার্যক্রম সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিভিন্ন এলাকার সংবেদনশীলতা মূল্যায়ন করে প্রয়োজন অনুযায়ী নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তুলনামূলকভাবে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি এবং অন্যান্য সহায়ক ব্যবস্থা জোরদার করা হবে, আর কম সংবেদনশীল এলাকায় পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে।
রাজনৈতিক পরিবেশ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে বড় ধরনের কোনো মতভেদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে এবং ঘোষিত তফসিল নিয়েও কোনো আপত্তি তোলা হয়নি। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সম্মতি থাকায় নির্বাচনকালীন পরিবেশকে তিনি অনুকূল বলে উল্লেখ করেন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, সার্বিক অবস্থা বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, ততই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও সুসংহত করা হবে। নির্বাচনের সময় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন সমন্বিতভাবে কাজ করবে বলে তিনি জানান।
সরকারের ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান প্রশাসন মূলত পূর্ববর্তী সরকার থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো অব্যাহত রাখতে ঋণ গ্রহণ করেছে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, এসব প্রকল্পের অনেকগুলোই ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। মাঝপথে এসব প্রকল্প বন্ধ করে দিলে ইতোমধ্যে ব্যয় করা অর্থ কার্যত অপচয় হবে, যা অর্থনীতির পরিভাষায় ‘ডেডওয়েট লস’ হিসেবে বিবেচিত।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়েই সরকার সীমিত সংখ্যক নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে চলমান প্রকল্পগুলো সম্পন্ন করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। পাশাপাশি তিনি জানান, সরকার কয়েক বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করেছে, যা আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা পূরণের ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থানকে প্রতিফলিত করে।
নির্বাচন সংক্রান্ত ব্যয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রয়োজনীয় তহবিলের বিস্তারিত দাবি জমা দেয়নি। তবে কমিশনের পক্ষ থেকে অর্থের চাহিদা জানানো হলে সরকার দ্রুত তা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করবে।
তিনি আরও জানান, নির্বাচনী সরঞ্জাম ও অন্যান্য লজিস্টিক বিষয় নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত। সরকার কমিশনের আর্থিক প্রয়োজনীয়তার ওপর কোনো ধরনের অযৌক্তিক সীমাবদ্ধতা আরোপ করবে না। ভোটের দিন ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জনবল, রসদ এবং অন্যান্য সহায়তার বিষয়গুলো কমিশন যে পরিমাণে প্রয়োজন বলে নির্ধারণ করবে, তা যাচাই করে সময়মতো বরাদ্দ দেওয়া হবে।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন উদ্যোগের উদাহরণ তুলে ধরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজনের প্রতি সরকার অতীতেও দ্রুত সাড়া দিয়েছে এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।