প্রযুক্তি ডেস্ক
বাংলা ভাষার জন্য প্রথমবারের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ প্ল্যাটফর্ম ‘কাগজ ডট এআই’ এবং নতুন বাংলা ফন্ট ‘জুলাই’ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে। রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বৃহস্পতিবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এই দুই প্রযুক্তির উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, গবেষক এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ‘কাগজ ডট এআই’ একটি বাংলা ভাষাভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্ল্যাটফর্ম, যা বাংলা ভাষায় লেখালেখি, দাপ্তরিক নথি প্রস্তুত, ভাষা প্রক্রিয়াকরণ এবং বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট তৈরিতে ব্যবহার করা যাবে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাংলা ভাষার ডিজিটাল ব্যবহারে বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা কমে আসবে এবং বাংলা ভাষাকে প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক ব্যবস্থার সঙ্গে আরও কার্যকরভাবে যুক্ত করা সম্ভব হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগে বাংলা ভাষার জন্য এ ধরনের পূর্ণাঙ্গ এআই প্ল্যাটফর্ম দেশে চালু হয়নি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, উদ্বোধনের আগে পরীক্ষামূলকভাবে গত দুই সপ্তাহে প্রায় চার হাজার ব্যবহারকারী ‘কাগজ ডট এআই’ ব্যবহার করেছেন এবং তারা সন্তোষজনক ফল পেয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে সবার জন্য আরও সহজলভ্য করে তুলতে এই প্ল্যাটফর্মের অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিত করে পর্যায়ক্রমে সোর্স কোডও উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কেবল মানক বাংলা নয়, দেশের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর ভাষা ও ভাষাগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণেও প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে প্রতিটি নৃগোষ্ঠীর ভাষা থেকে প্রায় ১০ হাজার মিনিটের মৌখিক ভাষা উপাত্ত সংগ্রহের পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। এসব উপাত্ত ব্যবহার করে বাংলা ভাষাভিত্তিক বৃহৎ ভাষা মডেল (ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল) তৈরির কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে, যা ভবিষ্যতে গবেষণা, উন্নয়ন এবং ডিজিটাল সেবায় ব্যবহৃত হতে পারবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, বর্তমানে যে এআই টুলগুলো তৈরি করা হচ্ছে, সেগুলোর এপিআই গবেষক ও ডেভেলপারদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। এর ফলে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়বে, ব্যবহারিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা সহজ হবে এবং সেই অনুযায়ী উন্নয়ন প্রক্রিয়া দ্রুততর হবে। তিনি উল্লেখ করেন, একটি কার্যকর ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে পারলে বাংলা ভাষা ও অন্যান্য স্থানীয় ভাষাকে সাইবার স্পেসে দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে নতুন বাংলা ফন্ট ‘জুলাই’ সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, দাপ্তরিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে তৈরি এই ফন্টটি কম্পিউটারনির্ভর বাংলা লেখার ক্ষেত্রে বিদ্যমান নানা সীমাবদ্ধতা দূর করতে সহায়ক হবে। পরিষ্কার টাইপফেস, মানসম্মত অক্ষর বিন্যাস এবং প্রযুক্তিগত সামঞ্জস্যের কারণে সরকারি দপ্তর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিক কাজে এই ফন্ট ব্যবহার সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জহিরুল ইসলামসহ অন্যান্য অতিথিরা। তারা বাংলা ভাষার প্রযুক্তিগত উন্নয়নে এ ধরনের উদ্যোগকে সময়োপযোগী বলে উল্লেখ করেন এবং ভবিষ্যতে গবেষণা ও উদ্ভাবন জোরদারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
উল্লেখ্য, ‘কাগজ ডট এআই’ প্ল্যাটফর্ম এবং ‘জুলাই’ বাংলা ফন্ট—এই দুই প্রযুক্তি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের বাস্তবায়নাধীন ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এসব উদ্যোগ বাংলা ভাষার ডিজিটাল ব্যবহারে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং ভবিষ্যতে প্রশাসনিক, শিক্ষাগত ও গবেষণামূলক কার্যক্রমে বাংলা ভাষার ব্যবহার আরও বিস্তৃত হবে।