নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজা শেষে তার মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নেওয়া হয়। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন হাদির বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা এবং সামাজিক ও নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও জানাজায় অংশ নেন।
জানাজা অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। এছাড়া ইনকিলাব মঞ্চের সহযোদ্ধা, সমর্থক এবং সাধারণ জনগণের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি দেখা যায়। সকাল থেকেই জাতীয় সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় মানুষের সমাগম বাড়তে থাকে। দুপুরের দিকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের ফার্মগেট, বিজয় সরণি, আসাদগেটসহ আশপাশের সড়ক ও এলাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
জানাজায় বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, শরীফ ওসমান হাদির আদর্শ ও চেতনা দেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে। তিনি বলেন, হাদির শিক্ষা ও বার্তা সমাজে দীর্ঘদিন প্রভাব বিস্তার করবে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করবে। বক্তব্যে তিনি দেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ও নাগরিক অধিকারের প্রসঙ্গে হাদির ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন।
এর আগে, সকালে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শরীফ ওসমান হাদির মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহটি নেওয়া হয় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। সেখানে গোসল ও কাফনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সহযোদ্ধা ও সমর্থকদের অংশগ্রহণে একটি মিছিলের মাধ্যমে মরদেহটি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আনা হয়।
ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শরীফ ওসমান হাদিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বাদ জোহর তার জানাজা আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জানাজা ও দাফনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে।
শরীফ ওসমান হাদি গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টন ও বিজয়নগর এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগ ও প্রচারণায় অংশ নিতে গেলে হামলার শিকার হন। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চলন্ত একটি মোটরসাইকেল থেকে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। গুলিটি তার মাথায় লাগে এবং তিনি গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে শরীফ ওসমান হাদিকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর রাতে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর খবরে রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।
হাদির মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৩ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে মরদেহটি সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। সন্ধ্যা ৫টা ৪৮ মিনিটে মরদেহ বহনকারী ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে মরদেহ গ্রহণ করেন পরিবারের সদস্য, সহকর্মী ও রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা।
শরীফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি করেছে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে।