জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
দক্ষিণ সুদানের আবেই সীমান্ত এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মরদেহ শনিবার সকালে দেশে পৌঁছেছে। শহীদ শান্তিরক্ষীদের মরদেহ বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ২০ ডিসেম্বর সকালে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে মরদেহ গ্রহণ ও আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, গত ১৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতাধীন একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে। ওই হামলায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী দলের ছয় সদস্য নিহত হন। হামলাটি ছিল পরিকল্পিত ও সহিংস, যা শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নিহত শান্তিরক্ষীরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অংশ হিসেবে দক্ষিণ সুদানে দায়িত্ব পালন করছিলেন। হামলার পরপরই তাদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শনিবার মরদেহগুলো বাংলাদেশে আনা সম্ভব হয়।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ শান্তিরক্ষীদের মরদেহ গ্রহণ করেন। এ সময় সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মরদেহ গ্রহণের সময় নির্ধারিত সামরিক আনুষ্ঠানিকতা অনুসরণ করা হয়।
আইএসপিআর আরও জানায়, নিহত শান্তিরক্ষীদের নামাজে জানাজা রোববার (২১ ডিসেম্বর) ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। জানাজার পর তাদের মরদেহ নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে পাঠানো হবে। পরে স্থানীয়ভাবে যথাযথ সামরিক মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন করা হবে। এই কার্যক্রমে সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট ইউনিট ও স্থানীয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।
বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা নিয়মিতভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। দক্ষিণ সুদানেও বাংলাদেশি সেনা ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘের ম্যান্ডেট অনুযায়ী বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, সংঘাত নিরসন এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন।
তবে সাম্প্রতিক এই ড্রোন হামলার ঘটনা শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি নতুন করে সামনে এনেছে। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর হামলা মোকাবিলায় শান্তিরক্ষা মিশনগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এ ধরনের হামলা ভবিষ্যতে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের কৌশল ও নিরাপত্তা কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে পারে।
নিহত ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর আত্মত্যাগ শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের অবদানকে আরও একবার তুলে ধরেছে। আন্তর্জাতিক পরিসরে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবন উৎসর্গ করা এই সদস্যদের স্মরণে রাষ্ট্রীয় ও সামরিক পর্যায়ে সম্মান প্রদর্শনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে এবং প্রযোজ্য সব ধরনের সরকারি সহায়তা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
দক্ষিণ সুদানের আবেই অঞ্চলে সংঘাত পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি স্থিতিশীল নয়। সেখানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের এই হতাহতের ঘটনা আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত সদস্যদের নিরাপত্তা ও দায়িত্ব পালনের চ্যালেঞ্জের বিষয়টি আবারও স্পষ্ট করেছে।