জেলা প্রতিনিধি
যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপুকে বুক পর্যন্ত খোঁড়া গর্তে পুঁতে রেখে চার কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের ঘটনায় আলোচিত বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান জনিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, অভয়নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সালাহউদ্দিন খান আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন। চার্জশিটভুক্ত আসামি আসাদুজ্জামান জনি নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। সম্প্রতি বিভিন্ন অভিযোগের কারণে কেন্দ্রীয় বিএনপি তার পদ স্থগিত করেছে। জনি অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া নৌবন্দর এলাকার জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী।
আসাদুজ্জামান জনির বাবা কামরুজ্জামুদার মজুমদারসহ আরও আটজনকে এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন—কামরুজ্জামান মিঠু, এনায়েত হোসেন শান্টু, বায়েজিদ হোসেন তরফদার, মারুফ হাসান তুহিন, রুহুল আমিন, সম্রাট হোসেন বাবু, নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান এবং সৈকত হোসেন হিরা।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, গত ৩ আগস্ট ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর স্ত্রী আসমা খাতুন অভয়নগর থানায় মামলা করেন। প্রাথমিকভাবে ছয়জনকে আসামি করা হলেও তদন্তে আরও চারজনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় এজাহারভুক্ত ও তদন্তে উঠে আসা মোট ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর আসামি সৈকত হোসেন হিরা ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপুকে কৌশলে আসাদুজ্জামান জনির অফিসে নিয়ে যান। সেখানে জনি তাকে মারধর ও আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে দুই কোটি টাকা দাবি করেন। পরবর্তীতে টিপুর স্ত্রী আসমা খাতুন সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে জনির প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে আরটিজিএসের মাধ্যমে দুই কোটি টাকা পাঠান। টাকা পাওয়ার পর টিপুকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এর কয়েক দিন পর ১৮ সেপ্টেম্বর পুনরায় টিপুকে অপহরণ করা হয়। সকালে চিলিশিয়া গ্রাম থেকে বাজারে যাওয়ার পথে তার গতিরোধ করা হয় এবং তাকে জনির ‘কণা ইকো পার্কে’ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জনি, সম্রাট ও মফিজুর রহমান অস্ত্র ঠেকিয়ে তাকে মারধর করেন। একপর্যায়ে তাকে বুক পর্যন্ত গর্ত খুঁড়ে বালুচাপা দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আরও দুই কোটি টাকা দাবি করা হয়। চাপের মুখে টিপু তার ব্যবস্থাপককে ফোন করে টাকা পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে ব্যবস্থাপক পূবালী ব্যাংক থেকে ৬৮ লাখ ও সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে ৩২ লাখ টাকা আরটিজিএসের মাধ্যমে পাঠান।
ব্যবসায়ীর স্ত্রী আসমা খাতুন এ ঘটনায় আসাদুজ্জামান জনিসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছিলেন। দীর্ঘ তদন্তের পর পুলিশ এ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছে, যা মামলার পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া শুরু করবে। এই ঘটনায় তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।