নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তনের পর ক্ষমতা ও সম্মানের বিষয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিমানবন্দরের পথেই উচ্ছ্বসিত জনসমাগমের ভালোবাসায় সিক্ত হওয়ার মুহূর্তে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতের অর্থ শেয়ার করেন এবং একইসঙ্গে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। বৃহস্পতিবার (তারিখ অনুযায়ী) বিকেল ৩টার পর তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই পোস্ট প্রকাশিত হয়।
তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন ঘিরে দুপুরের পর থেকেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। দীর্ঘদিন পর দেশের মাটিতে পা রাখার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিমানবন্দর-সংলগ্ন সড়ক ও ৩০০ ফিট এলাকার দিকে যাওয়ার পথ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতিও ছিল উল্লেখযোগ্য। বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফিট এলাকায় ফেরার পথে তারেক রহমান জনতার অভিবাদন গ্রহণ করেন। ওই সময় তারেক রহমানের গাড়িবহরকে ঘিরে জনতার উচ্ছ্বাস, স্লোগান ও করতালি শোনা যায়। সমবেত মানুষের মুখে ‘তারেক রহমান’, ‘বিএনপি’ ও ‘দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব’ সংক্রান্ত বিভিন্ন স্লোগান প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।
ঠিক সেই সময়েই তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতের অর্থ বাংলায় শেয়ার করেন। পোস্টে তিনি লিখেন, “হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ্! আপনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান করেন এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নেন; যাকে ইচ্ছা আপনি সম্মানিত করেন আর যাকে ইচ্ছা আপনি হীন করেন। কল্যাণ আপনারই হাতে। নিশ্চয়ই আপনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান।” আয়াতটি মূলত সূরা আল-ইমরান (৩:২৬)-এর অনুবাদ, যেখানে ক্ষমতা, সম্মান ও সার্বভৌমত্বের মালিকানা যে একমাত্র সৃষ্টিকর্তার হাতে—তা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। পোস্টে আয়াতের পাশাপাশি একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়, যেখানে জনতার উচ্ছ্বাস, সড়কে মানুষের ঢল এবং তারেক রহমানের গাড়িবহরকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা ও অভিবাদনের দৃশ্য ধারণ করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই পোস্ট প্রকাশের পর অল্প সময়ের মধ্যেই তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। রাজনৈতিক নেতাদের দেশে ফেরা উপলক্ষে সাধারণত বিবৃতি বা প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও, ক্ষমতা ও সম্মানের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে কোরআনের আয়াত শেয়ার করার ঘটনা জনপরিসরে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। ডিজিটাল বিশ্লেষকদের মতে, ধর্মীয় বার্তা ও ব্যক্তিগত কৃতজ্ঞতার সংমিশ্রণে তৈরি এই পোস্ট নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হয়, যা দ্রুত অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ।
তারেক রহমানের এই পোস্ট ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এটি তার ব্যক্তিগত কৃতজ্ঞতার প্রকাশ এবং নেতৃত্বের প্রতি আস্থা ও দায়িত্ববোধকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা। তবে সংবাদ প্রতিবেদনের নীতিগত দৃষ্টিকোণ থেকে দলীয় মতামত, আবেগী ব্যাখ্যা বা মূল্যায়ন বাদ রেখে কেবল ঘটনাপ্রবাহ, বক্তব্যের মূল প্রতিপাদ্য ও জনসমাগমের প্রেক্ষাপটকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে তারেক রহমান দীর্ঘদিন দেশের বাইরে অবস্থান করেন এবং বিভিন্ন সময়ে বিদেশ থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে দলীয় কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। তার দেশে প্রত্যাবর্তন তাই রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুদিন ধরেই আলোচনায় ছিল। এই প্রত্যাবর্তনের দিনে জনসমাগমের ব্যাপকতা দলটির সাংগঠনিক শক্তি, জনভিত্তি ও নেতাকর্মীদের সমন্বিত প্রস্তুতির সক্ষমতাকে প্রকাশ করে। বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফিট এলাকার সড়ক পর্যন্ত মানুষের ভিড় জানান দেয়, রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি আবেগ, আকাঙ্ক্ষা ও আগ্রহ কেবল দলীয় পরিমণ্ডলে সীমাবদ্ধ নয়, বরং জনপরিসরেও বিস্তৃত।
রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, কোনো নেতা যখন গণসংযোগের মুহূর্তে কেবল রাজনৈতিক বার্তার পরিবর্তে ধর্মীয় মূল্যবোধ, কৃতজ্ঞতা ও সার্বভৌম ক্ষমতার উৎসের মতো বিষয়কে সামনে আনেন, তখন তা ভিন্ন এক বয়ান তৈরি করে। এতে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ক্ষমতার দাবি বা নেতৃত্বের অবস্থান নয়, বরং ক্ষমতা ও সম্মানের নশ্বরতা এবং এর উৎস নিয়ে এক ধরনের দার্শনিক-নৈতিক স্মরণ তৈরি হয়। এর প্রভাব সরাসরি ভোট বা রাজনীতির কৌশলগত বার্তা বহন না করলেও, জনপরিসরে নেতৃত্বের ভাবমূর্তি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে।
ডিজিটাল মিডিয়া পর্যবেক্ষকদের মতে, এই পোস্টের ভাইরাল বিস্তার থেকে বোঝা যায়—বাংলাদেশের রাজনৈতিক যোগাযোগে ধর্মীয় রেফারেন্স বা আধ্যাত্মিক বার্তা যুক্ত হলে তা বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম। তবে এই মনোযোগের প্রকৃতি আবেগনির্ভর হলেও, তথ্যের নির্ভুলতা, বক্তব্যের উৎস ও সময়ের প্রেক্ষাপট যাচাই করেই তা উপস্থাপন করা প্রয়োজন। তারেক রহমানের পোস্টের ক্ষেত্রেও আয়াতের অনুবাদ, প্রকাশের সময় এবং যাত্রাপথে জনসমাগমের দৃশ্য—সবই তথ্যগতভাবে মিলিয়ে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
বিমানবন্দর-সংলগ্ন সড়কে যান চলাচল সাময়িকভাবে ধীরগতিতে চলতে দেখা যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভিড় নিয়ন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন। তবে কোথাও বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়নি। জনসমাগম মূলত শান্তিপূর্ণ উচ্ছ্বাস, অভিবাদন ও স্লোগান-নির্ভর ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
তারেক রহমানের এই কোরআন-উদ্ধৃতি পোস্ট বাংলাদেশের ডিজিটাল রাজনৈতিক যোগাযোগে একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসেবে ইতোমধ্যেই আলোচনায় স্থান করে নিয়েছে। এতে রাজনৈতিক ভাষ্যের বাইরে ক্ষমতা ও সম্মানের উৎস, মালিকানা ও নশ্বরতা নিয়ে ধর্মীয় বয়ানের ব্যবহার লক্ষ করা গেছে—যা বাংলাদেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে নতুন করে জনআলোচনা সৃষ্টি করেছে।