নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চিকিৎসাধীন মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এভারকেয়ার হাসপাতালে গেছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে তিনি হাসপাতালে পৌঁছান। এর আগে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মঞ্চ ত্যাগ করেন এবং সেখান থেকে সরাসরি হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে মঞ্চ ছাড়ার পর তারেক রহমানকে বহনকারী গাড়ি দ্রুততম সময়ে এভারকেয়ার হাসপাতালের দিকে অগ্রসর হয়। সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিটে তার গাড়ি হাসপাতাল চত্বরে প্রবেশ করলে সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। সকাল থেকেই বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীরা হাসপাতালের মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে ছিলেন। তার গাড়ি নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে চত্বরে ঢোকার সময় কর্মী-সমর্থকদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ও স্লোগান দিতে দেখা যায়। নেতাকর্মীরা দলীয় পতাকা, ফেস্টুন ও ব্যানার হাতে স্লোগান দিলেও দলের পক্ষ থেকে এভারকেয়ার হাসপাতাল এলাকায় স্লোগান দিতে আগেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সমর্থকদের আবেগঘন প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে একটি বিশেষ বাসে করে ৩০০ ফিট সড়কসংলগ্ন গণসংবর্ধনা মঞ্চের উদ্দেশে রওনা দেন তারেক রহমান। বিমানবন্দর থেকে মঞ্চ পর্যন্ত সড়কের দুই ধারে বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ সমর্থকরা হাত নেড়ে তাকে স্বাগত জানান। প্রায় ৩ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের যাত্রা শেষে বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে তিনি মঞ্চে পৌঁছান।
বিমানবন্দরে তারেক রহমানকে বহনকারী বিমানটি বৃহস্পতিবার দুপুর ১১টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এর মাধ্যমে দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফেরেন তিনি। ইমিগ্রেশন ও আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর ভিআইপি লাউঞ্জে তাকে প্রথমে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে মহাসচিবসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তারেক রহমান আলিঙ্গন করেন এবং উপস্থিত নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান এবং দীর্ঘ সময় লন্ডনে অবস্থান করেন। এই ১৭ বছরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপির নেতৃত্ব কাঠামো, আন্দোলন-সংগ্রামের ধরন ও দলীয় কৌশলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। তারেক রহমানের দেশে ফেরা তাই দলটির জন্য রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক উভয় দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘ নির্বাসন শেষে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ ও কৌশলগত প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচন, বিএনপির সাংগঠনিক পুনর্গঠন, দলীয় ঐক্য সুসংহত করা এবং সরকারবিরোধী রাজনৈতিক পরিসরে নেতৃত্বের দৃশ্যমানতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
হাসপাতালে যাওয়ার ঘটনাটি রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে আলাদা ব্যক্তিগত ও মানবিক প্রেক্ষাপটে ঘটলেও, তার আগমনকে কেন্দ্র করে সমর্থকদের উপস্থিতি রাজনৈতিক আবেগের প্রতিফলন হিসেবে দেখা যাচ্ছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, এটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত সফর এবং রাজনৈতিক কর্মসূচির অংশ নয়। দলীয় নেতাদের পক্ষ থেকে আগেই কর্মীদের শান্ত ও সংযত আচরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিনটিকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে যে আবেগময় উচ্ছ্বাস দেখা গেছে, সেটি তার দীর্ঘ অনুপস্থিতি, দলীয় সংকটকালীন নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের প্রেক্ষাপটে তৈরি হওয়া প্রত্যাশার ফল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে রাজনৈতিক কর্মসূচি ও ব্যক্তিগত সফর—দুই ক্ষেত্রেই শৃঙ্খলা ও সংযত আচরণ নিশ্চিত করা দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকবে বলেও মত দিয়েছেন পর্যবেক্ষকরা।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, তারেক রহমানের দেশে ফেরার পর দলটি সাংগঠনিকভাবে আরও সক্রিয় ও সুসংহত হওয়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করবে। আগামীতে তিনি রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বৈঠক, জেলা পর্যায়ের সফর এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অংশ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এভারকেয়ার হাসপাতাল এলাকায় তার উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সতর্ক অবস্থানে ছিল। হাসপাতাল চত্বরে গাড়ি প্রবেশের পর সমর্থকদের ভিড় ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসে।
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে আলোচনা তৈরি হয়েছে, সেটি আগামী দিনগুলোতে আরও বিস্তৃত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।