নিজস্ব প্রতিবেদক
পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে রেলপথে বাড়ি ফিরছেন রাজধানীর বাসিন্দারা। ঈদযাত্রার তৃতীয় দিনে আজ সকাল থেকে সাতটি ট্রেন দেরিতে ছেড়েছে। এর মধ্যে তিনটি ট্রেন বেশি দেরিতে ছেড়েছে। এসব ট্রেন দেরিতে ছাড়ার জন্য আলাদা কারণ দেখিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
গত দুই দিনের তুলনায় আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মগুলোতে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে।
কমলাপুর স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবন, নীলসাগর, ধূমকেতু, রংপুর এক্সপ্রেস, তিতাস কমিউটার, একতা এক্সপ্রেস, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেন এক থেকে দুই ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে। এসব ট্রেনের বেশির ভাগই উত্তরবঙ্গগামী।
কমলাপুর স্টেশন সূত্র বলছে, চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা। প্ল্যাটফর্মে আসামাত্রই অপেক্ষমাণ যাত্রীদের অনেকে ট্রেনটির ছাদে উঠে পড়েন। এ সময় স্টেশন কর্তৃপক্ষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে তাঁদের ট্রেনের ছাদ থেকে নামান। এরপর তাঁদের ছাদ থেকে নামিয়ে ট্রেনের ভেতরে ঢোকার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এসব করতে গিয়ে ট্রেনটি ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট দেরি করে ৯টা ২০ মিনিটে স্টেশন ছাড়ে।
নীলসাগর এক্সপ্রেসের যাত্রী আবু সালেহ। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। তিন সন্তান, স্ত্রীসহ তিনি নীলফামারীর গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদ্যাপন করতে যাচ্ছেন। সালেহ বলেন, ‘সড়কে যানজট হয় বলে রেলপথে ঈদে বাড়ি যাই। কিন্তু এখানেও তো সেই দেরি হলো। মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে ভোরে কমলাপুরে এসেছি। লাভ হলো না তো।’
রাজশাহীগামী ধূমকেতু ৬টায় কমলাপুর স্টেশন ছাড়ার কথা। সেটি ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট দেরি করে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে স্টেশন ছাড়ে।
রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছাড়ার নির্ধারিত সময় ছিল সকাল ৯টা ১০ মিনিটে। ট্রেনটি ১ ঘণ্টা দেরি করে ১০টা ১০ মিনিটের দিকে কমলাপুর স্টেশন ছাড়ে।
স্টেশনের ১ নম্বর প্লাটফর্মে অপেক্ষা করছিল রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি। এই ট্রেনে করে রংপুর যাচ্ছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তাহমিদ হাসান। সঙ্গে যাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী ও এক সন্তান। বাড়ি যাবেন বলে এক দিন আগে কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়েছেন তিনি। তাহমিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়কে যেতে অনেক যানজটে পড়তে হয়। খরচও বেশি লাগে। এ কারণে ট্রেনে করেই প্রতিবার বাড়িতে যাই। ট্রেনে এক ঘণ্টা ধরে বসে আছি। ট্রেন লেট। ট্রেন ছাড়লেই ঈদের আনন্দ শুরু।’
সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল সোয়া আটটায় স্টেশন ছাড়ার কথা। সেটি ৩০ মিনিট দেরি করে পৌনে ৯টায় স্টেশন ছাড়ে।
কয়েকটি ট্রেনের দেরির প্রসঙ্গে কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ঈদ উপলক্ষে কমলাপুরে যাত্রীর চাপ বাড়ছে। ধূমকেতু এক্সপ্রেস ছাড়া সকাল থেকে বেশির ভাগ ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়েছে। কয়েকটি অবশ্য আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে। যেসব ট্রেন দেরি হচ্ছে সেগুলো উত্তরাঞ্চলের। এটাকে বিপর্যয় বলা যায় না। নিরাপদে যাত্রীদের পৌঁছাতেই স্টেশনগুলোতে একটু সময় নিয়ে যাত্রী নামাতে হচ্ছে। ওই পার থেকে আসতে দেরি হয় বলে কমলাপুর থেকে ট্রেন ছাড়তেও দেরি হয়েছে।
নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটির দেরি প্রসঙ্গে মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ছাদে, ইঞ্জিনে যাত্রীদের না উঠতে অনুরোধ করা হচ্ছে। কোনোভাবেই যাত্রীদের ছাদে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে নীলসাগর ট্রেনের ছাদে অনেকেই উঠে পড়েন। তাঁদের নামাতে গিয়ে দেরি হয়। এসব নিয়ে যাত্রীদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে।
তিতাস কমিউটার ছাড়ার কথা সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে। সেটি স্টেশন ছাড়ে ১০টা ১৫ মিনিটে।
৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছাড়ার কথা সকাল ১০টা ১০ মিনিটে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একতা এক্সপ্রেস কমলাপুর ছেড়ে যায়।
একতা এক্সপ্রেসের দেরির প্রসঙ্গে কমলাপুর স্টেশন ব্যবস্থাপক বলেন, যেসব ট্রেনের চাহিদা বেশি থাকে, সেখানে বাড়তি কোচ সংযুক্ত করা হয়। একতা এক্সপ্রেসেও একটি কোচ যুক্ত করা হয়েছে। এ কারণে দেরি হচ্ছে। এটা অপারেশনাল বিষয়।
ঢাকা থেকে তারাকান্দিগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস বেলা ১১টায় ছাড়ার কথা ছিল। পরে ট্রেনটি সাড়ে ১১টায় ছাড়ে।
কমলাপুর স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ১৩টি ট্রেন কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যায়। সারা দিনে দুটি বিশেষ ট্রেনসহ ৩৯ জোড়া ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।