1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৩০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ২০২৬ সামনে রেখে ভোটার সচেতনতায় ‘ভোটের গাড়ি’ কর্মসূচি শুরু বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ডিগ্রির পাশাপাশি সক্ষমতা ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্তির ওপর গুরুত্বারোপ ভিয়ারিয়ালকে হারিয়ে লা লিগায় শীর্ষস্থান আরও সংহত করল বার্সেলোনা গ্রিসের গাভদোস উপকূলে ৫৩৯ অভিবাসী উদ্ধার, ৪৩৭ জন বাংলাদেশি শহীদ শরিফ ওসমান হাদির স্মরণে যমজ সন্তানের নামকরণ যশোরে ব্যবসায়ী অপহরণ ও চাঁদা আদায়ের অভিযোগে বিএনপি নেতা জনিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল খুলনায় এনসিপি নেতা মোতালেব শিকদার গুলিবিদ্ধ নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা-নয়াদিল্লির বিবাদ বেড়েছে ঐক্যবদ্ধ থেকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান তারেক রহমানের স্বর্ণের বাজারে নতুন রেকর্ড মূল্য নির্ধারণ

সীমাহীন দুর্ভোগ উত্তরবঙ্গের পথযাত্রায় বাস যেন সোনার হরিণ, পশুবাহী ট্রাকেই বাড়ি ফিরছে মানুষ

রিপোর্টার
  • আপডেট : শুক্রবার, ৮ জুলাই, ২০২২
  • ১৫২ বার দেখা হয়েছে

কালিয়াকৈর ও সাভার প্রতিনিধি

পোশাক শ্রমিক রহিমা খাতুন। চাকরি করেন সাভারের একটি শিল্প কারখানায়। ছুটি বলতে বছরে দুই ঈদ। তাই শত কষ্ট হলেও অন্তত বছরে দুইবার রংপুরের পীরগাছায় গ্রামের বাড়িতে পরিবারের কাছে যান। এবারো ঈদের ছুটিতে বাড়ি যেতে চাইলেও পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। যাত্রীর তুলনায় বাসের সংখ্যা নেই বললেই চলে। আশুলিয়ার বাইপাইলে দীর্ঘ ৩ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাননি। কোনো উপায় না পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে উঠে পড়েছেন ট্রাকে। ঢাকা থেকে ফিরতি পথের কোরবানির পশুর খালি ট্রাকে উঠতে হয়েছে তাকে। দুর্গন্ধ-অপরিষ্কার ট্রাকে ভোগান্তি নিয়ে নাক চেপে অস্বস্তির যাত্রা তার। কেবল রহিমা খাতুন নন, তার হাজার হাজার ঘুরমুখী মানুষ উপায় না পেয়ে গোবর মাখানো গশুবাহী ট্রাকে করে বাড়ি ফিরছেন।

রহিমান খাতুন বললেন, সকাল এসেছি, দুপুর হয়ে গেছে। কোনো বাস নাই। দু’একটা পেলেও এত যাত্রী যে কাছেই যাওয়ার সুযোগ নাই। পরে বাধ্য হয়ে ময়লা ট্রাকে উঠছি। বাড়ি তো যাওয়া লাগবে। কি আর করার!

শুক্রবার দুপুরে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখা যায় একই চিত্র। সাভারের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, শত শত ঘরমুখী মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। দুই একটা বাস এলেও উপচে পড়ছে যাত্রীরা। বাসগুলো আগে থেকে প্রায় ভর্তি থাকে মানুষে। বাড়তি ভাড়া দিয়ে দুই-চারজনকে উঠালেও তাদের দাঁড়িয়ে দীর্ঘ পথ যেতে হয়। তাই কোরবানির হাটে পশু নামিয়ে দিয়ে ফিরতি পথে প্রায় ট্রাকই যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ ট্রাকই ময়লা ও অপরিচ্ছন্ন। ট্রাকে খড়কুটো আর গোবর মাখানো। দুর্গন্ধ-অস্বস্তি নিয়ে কেউ বসে, কেউ দাঁড়িয়ে যাত্রা শুরু করেছেন।

কথা হয় ট্রাকের যাত্রী জাহাঙ্গীর আলমের সাথে। তিনি বলেন, রাত থেকে দেখেছি এমন কোনো গরুর ট্রাক নেই যে খালি যাচ্ছে। সব ট্রাকেই কিছু না কিছু মানুষ আছেই। ট্রাকওয়ালাদের তেমন কষ্ট নাই, যাত্রীরাই খালি ট্রাক দেখলে দৌড়ে আসছে। যাত্রীরাই চালককে জিজ্ঞেস করছে গাড়ি কই যাবে। গন্তব্য মিলে গেলেই হলো। লাফিয়ে লাফিয়ে যাত্রীরা উঠছেন ট্রাকে। রাতেও একবার বাসে ওঠার চেষ্টা করেছিলাম। ৪০০ টাকার ভাড়া এখন ৮০০। পরে ফিরে গিয়েছিলাম বাসায়। আজ সকাল থেকে আবার চেষ্টা শুরু করি। বাধ্য হয়ে এই ট্রাকেই উঠছি।

 

একই অবস্থা কালিয়াকৈরে। শিল্প অধ্যুসিত এলাকা কালিয়াকৈরে বিভিন্ন জেলা হতে আগত লক্ষ লক্ষ মানুষের বসবাস। বৃহস্পতিবার দুপুরে কালিয়াকৈরসহ আশপাশের শিল্প কারখানাগুলো একত্রে ছুটি হওয়ার পর যাত্রীদের ঢল নামে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে। পরিবার ও আপনজনদের সাথে ঈদ উদযাপন করতে নানান প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন এই কর্মজীবী মানুষেরা। এত যাত্রী একত্রে বের হওয়ার কারণে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। এদিকে আবার পরিবহন সংকটের কারণে ভোগান্তি চরমে উঠেছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় হচ্ছে উত্তরবঙ্গসহ ২৬টি জেলার মানুষের যাতায়াতের প্রবেশমুখ। তাই শুক্রবার ভোর থেকেই কোনাবাড়ি, জয়দেবপুর, আশুলিয়া ও সাভার এসব এলাকা থেকে বিভিন্ন জেলায় যাবার জন্য চন্দ্রা টার্মিনালে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ভাড়া বেশি দিয়েও পরিবহন পাচ্ছেন না এসব যাত্রীরা। তাই পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে তারা। পরিবহন সংকট ও ভাড়া দ্বিগুণ হওয়ায় বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করছেন যাত্রীরা। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে পশুবাহী ট্রাক, পিক আপ ও মাইক্রোবাস।

সরজমিনের কালিয়াকৈরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে যাত্রীবাহী বাসের পরিবর্তে ব্যবহার করছে পশুবাহী ট্রাক, পিকআপ, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস। মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসের থেকে ট্রাকের সংখ্যাই বেশি দেখা গেল। উপায় না পেয়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে পশুবাহীর ট্রাকে চেপেই পরিবার নিয়ে গন্তব্যে ছুটছে এসব ভুক্তভোগী যাত্রীরা।

এদিকে বিকেল গড়াতেই টার্মিনালের উভয় পাশে বেশ যানজট দেখা দিয়েছে। ধীরগতিতে থেমে থেমে চলছে বাসগুলো। আরও জানা গেল, টাঙ্গাইল থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর দিকে দীর্ঘ যানজট, সেদিক থেকেও গাড়ি আসতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে, সময় ও খরচ হচ্ছে ব্যাপক। এ অবস্থায় ধারণা করা যাচ্ছে দিনের সাথে রাত যত গভীর হবে ভোগান্তি তত চরমে পৌঁছাবে। মহাসড়কের পাশে জায়গায় জায়গায় অনেক যাত্রীদের স্ত্রী সন্তানসহ পরিবার নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। ভুক্তভোগী যাত্রীদের আহাজারিতে ক্রমেই মহাসড়ক ভারী হয়ে উঠছে।

টাঙ্গাইলের গোপালপুরের এক যাত্রীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বাড়ি যাওয়ার জন্য অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। গোপালপুরের ভাড়া হচ্ছে দেড়শ টাকা। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকরা বলছে এখন যদি যাও তাহলে ৫০০ টাকা ভাড়া লাগবে। তাও আবার দাঁড়িয়ে যেতে হবে, গেলে চলো না গেলে থাকো এসব বলছে তারা।

 

বয়স্ক এক যাত্রী ধানবাড়ি যাবেন। তিনি বললেন, ধনবাড়ী ভাড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা করে যাই, এখন ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা চাচ্ছে। কিভাবে বাড়ি যাবো আমার কাছেতো এত টাকাও নেই।

আজহার নামের একজন বলেন, আমি বগুড়া যাবো। কোন গাড়ি পাচ্ছি না। ট্রাকে করে যেতে চাচ্ছি, তাও ৪০০ টাকার ভাড়া ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা চাচ্ছে।

মর্জিনা নামের এক যাত্রী বলেন, টাকা কোনো বিষয় না, এখন তো গাড়িই পাচ্ছি না। কিভাবে বাড়ি যাবো, অনেকক্ষণ যাবত বসে আছি আমরা। সেই ১টা ৩০ মিনিটে চন্দ্রায় এসেছি, এখন ছয়টা বাজে।

সুজা নামের এক বাসচালক বলেন, আমি সিরাজগঞ্জ থেকে চন্দ্রায় নয় ঘণ্টায় এসেছি। এভাবে যানজট থাকলে আমাদের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাবে। যানজট বেশি থাকার কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে। রাস্তায় অনেক যাত্রী আছে কিন্তু আমরা নিতে পারছি না।

শাহজাহান নামের বাসচালক বলেন, আমি রংপুর যাচ্ছি। যাত্রীর অনেক চাপ। কাছে ভাড়াও সীমিত আছে।

 

সালনা হাইওয়ে থানার ওসি ফিরোজ মাহমুদ বলেন, যানজট নিরসনে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। তবে গত ঈদের তুলনায় এবার যানজট এবং ভোগান্তি অনেক কম। আমরা রাতদিন সবসময় যাত্রীদের ভোগান্তি কমানোর জন্য মাঠে কাজ করে যাচ্ছি।

শুক্রবার দুপুরে গাজীপুরের চন্দ্রা বাস টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে গাজীপুরের পুলিশ সুপার এস এম সফিউল্লাহ বলেন, এবারের ঈদযাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রা টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়াও মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল রোধ, চাঁদাবাজি, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েও জেলা পুলিশের প্রতিটি সদস্যরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল যানজট নিরসন। আমরা সেটিও কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। আশা করি বিকেল থেকেই সড়কে যানবাহন ও লোকজনের চাপ কমে যাবে।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com