ঢাকা, ২০ অক্টোবর ২০২৫:
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাপিত ই-গেটগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সোমবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “যাদের ই-পাসপোর্ট রয়েছে, তারা পাসপোর্ট স্ক্যান করিয়ে ই-গেট ব্যবহার করে বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে পারবেন। ই-গেট প্রযুক্তি ইতোমধ্যে ইনস্টল করা হয়েছে, এখন শুধু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষা।”
সভায় প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের—যাদের সরকার ‘রেমিট্যান্সযোদ্ধা’ হিসেবে চিহ্নিত করে—জন্য কিছু নীতিগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেন উপদেষ্টা। তিনি জানান, এই জনগোষ্ঠীর পাসপোর্ট নবায়ন ও ইস্যুর ফি কমানোর বিষয়ে ইতিবাচক বিবেচনা করা হচ্ছে।
“রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের আমরা সম্মানজনকভাবে দেখি, কিন্তু বাস্তবে তারা অনেক ক্ষেত্রেই সেই সম্মান থেকে বঞ্চিত হন। এজন্য আপাতত পাসপোর্ট ফি কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে,” বলেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তবে কতটুকু ফি কমানো হবে, সে বিষয়ে এখনো নির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা আসেনি। উপদেষ্টা জানান, “প্রবাসীদের গন্তব্যভেদে পাসপোর্ট ফি ভিন্ন হতে পারে, তাই সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ফি হ্রাসের হার নির্ধারণ করা হবে।”
রেমিট্যান্স প্রেরকদের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করতে বিমানভ্রমণে সেবার মান বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করবো যেন তারা বিমানে ভালো সার্ভিস পান। শুধু বিমানে নয়, বিমানবন্দরে নামার পরও যেন সেবা-সুবিধা পান তা নিশ্চিত করা হবে।”
বিমানের ভাড়া কমানো হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিষয়টি বাণিজ্যিক এবং প্রতিযোগিতামূলক। তবু বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লাভজনক অবস্থান থেকে যতটা সম্ভব সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করবে।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ই-পাসপোর্ট প্রদান কার্যক্রম সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ই-পাসপোর্ট ইস্যুর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও প্রযুক্তি প্রস্তুত করা হয়েছে।
“ই-গেট ব্যবহার করার জন্য ই-পাসপোর্ট বাধ্যতামূলক। তাই আমরা চাই প্রবাসীরাও দ্রুত এই সুবিধার আওতায় আসুক,” বলেন তিনি।
কোর কমিটির সভায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একাধিক অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন নিরাপত্তাজনিত ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য তিনি প্রকাশ করেননি।
সরকার ২০২৩ সাল থেকে দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে আধুনিক বায়োমেট্রিক যাচাই ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে ই-গেট স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বিমানবন্দরে যাত্রীদের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। ই-পাসপোর্টধারী যাত্রীরা স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন, যা সময় সাশ্রয় ও নিরাপত্তা উভয় দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রবাসী শ্রমিকদের পাসপোর্ট ফি ও বিমানযাত্রা সংক্রান্ত সুবিধা বাড়ানো হলে তা শুধু জনসেবার মানোন্নয়ন নয়, বরং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান উৎস—রেমিট্যান্স প্রবাহ—রক্ষায় সহায়ক হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।