বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা ও সুরক্ষা কার্যক্রমে ৫০ লাখ মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। এই অর্থ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর মাধ্যমে ব্যবহৃত হবে। সোমবার ইউএনএইচসিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, প্রদত্ত অনুদান primarily প্রতিবন্ধী শরণার্থীদের সেবা কার্যক্রম, সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদারকরণ, এবং রান্নার জন্য পরিচ্ছন্ন জ্বালানি সরবরাহে ব্যবহৃত হবে। এর মাধ্যমে শরণার্থী শিবিরগুলোতে বসবাসরত সর্বাধিক ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর সহায়তা নিশ্চিত করা হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার এই আর্থিক সহায়তা থেকে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় হবে প্রতিবন্ধী শরণার্থীদের কল্যাণে। এর আওতায় প্রাথমিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা, প্রয়োজন অনুযায়ী পুনর্বাসন, সহায়ক যন্ত্রপাতি সরবরাহ, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও মনোসামাজিক সহায়তা প্রদান করা হবে। সেইসঙ্গে, সহজে ব্যবহারযোগ্য ও প্রতিবন্ধীবান্ধব গোসলখানা ও শৌচাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এই ধরণের সহায়তা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য একটি বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অনুদান থেকে রান্নার জন্য তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সরবরাহ কার্যক্রমও জোরদার করা হবে। ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, শরণার্থী শিবিরে এলপিজি ব্যবহারে ইতোমধ্যেই বেশ কিছু ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। নারী ও কিশোরীদের জন্য আগুন জ্বালানোর কাঠ সংগ্রহের সময় নিরাপত্তা ঝুঁকি কমেছে, শিশুদের পড়াশোনার জন্য বাড়তি সময় পাওয়া যাচ্ছে এবং আশপাশের বনাঞ্চলের ওপর চাপও হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি ইভো ফ্রেইসেন দক্ষিণ কোরিয়ার এই সহায়তার প্রশংসা করে বলেন, “রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিশেষ করে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তা অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। এই জীবনরক্ষাকারী সহযোগিতার ঘাটতির সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণ ও সরকারের এই অনুদান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।”
তিনি আরও বলেন, এই ধরনের সহযোগিতা শুধু রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় নয়, বরং স্বাগত প্রদানকারী বাংলাদেশের সমাজ ও পরিবেশ রক্ষাতেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযান শুরু হওয়ার পর প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে কক্সবাজার ও ভাসানচরে তাদের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। তাদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর বাংলাদেশ নির্ভরশীল। তবে সম্প্রতি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট এবং আন্তর্জাতিক সহায়তার ঘাটতির কারণে মানবিক কার্যক্রমগুলো ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়া বিগত বছরগুলোতেও রোহিঙ্গাদের জন্য নিয়মিতভাবে সহায়তা প্রদান করে আসছে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে তারা বাংলাদেশে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী একটি দেশ হিসেবে পরিচিত।