বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)-এর কাছে চলমান বিসিএসের অগ্রগতি বিষয়ে ১৫ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রবিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে এনসিপির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল পিএসসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে এই প্রস্তাবনা পেশ করেছে।
প্রতিনিধিদলে ছিলেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন এবং যুগ্ম সদস্যসচিব মিরাজ মিয়া। তারা পিএসসির কাছে বিসিএস পরীক্ষার কার্যক্রমের দ্রুত অগ্রগতি এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করেছেন।
এনসিপির প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে বিসিএস পরীক্ষা সম্পর্কিত নানান প্রশাসনিক এবং কার্যকরী পরিবর্তনের সুপারিশ, যার মধ্যে কিছু প্রস্তাব বিসিএসের বিভিন্ন স্তরের পরীক্ষা, ফল প্রকাশ, এবং ক্যাডার পদের পুনর্বিন্যাসের বিষয় নিয়ে।
এনসিপির ১৫ দফা প্রস্তাবনা নিম্নরূপ:
১. নন-ক্যাডার বিধি সংশোধন: পিএসসি থেকে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে দ্রুত চিঠি ইস্যু করার মাধ্যমে ২৩ নন-ক্যাডার বিধি সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে, যা ৪৩তম বিসিএস থেকেই কার্যকর করা যাবে।
২. ৪৩তম বিসিএসে নন-ক্যাডার সুপারিশ দ্রুত সম্পন্ন: ৪৩তম বিসিএসের নন-ক্যাডার প্রার্থীদের অধিযাচিত পদে দ্রুত সুপারিশ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
৩. ৪৪তম বিসিএসে পোস্ট বৃদ্ধি: ৪৪তম বিসিএসে অধিযাচিত ৮৭০টি পোস্ট বৃদ্ধি এবং ফলাফল পুনরায় প্রকাশের কার্যক্রম চলতি সপ্তাহেই শুরু করা। গেজেট প্রকাশও চলতি বছরেই নিশ্চিত করা উচিত।
৪. নন-ক্যাডার বিধির সংশোধন: ২০২৩ সালের নন-ক্যাডার বিধির সংশোধন দ্রুত করার মাধ্যমে ৪৩ থেকে ৪৭তম বিসিএসের মধ্যে সর্বোচ্চ নন-ক্যাডার পদে সুপারিশ অব্যাহত রাখা।
৫. ১২ গ্রেডের হেড টিচারদের পুনর্বিবেচনা: ৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডারে পূর্বে ১২ গ্রেডের হেড টিচার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্তদের মেধার ভিত্তিতে নতুন সার্কুলারে অন্তর্ভুক্ত করা।
৬. ৪৫তম বিসিএস ভাইভায় নম্বর আপডেট: ৪৫তম বিসিএসের ভাইভা হাজিরা পত্রে ভাইভা নম্বর ১০০ আপডেট করার পরামর্শ দেয়া হয়।
৭. প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভার নম্বর প্রকাশ: পরীক্ষার প্রতিটি স্তরের নম্বর প্রকাশের মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
৮. চূড়ান্ত নম্বরপত্র ওয়েবসাইটে প্রকাশ: চূড়ান্ত ফলাফল ওয়েবসাইটে রোল নম্বর দিয়ে দেখতে পারার ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. পুলিশ ভ্যারিফিকেশন জটিলতা কমানো: পুলিশ ভ্যারিফিকেশন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সময়সীমা কমিয়ে এক মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার পরামর্শ দেয়া হয়।
১০. ক্যালেন্ডার ইয়ারে বিসিএস শেষ করা: প্রতি বছর ক্যালেন্ডার ইয়ারে বিসিএস পরীক্ষা শেষ করার পরিকল্পনা নিতে হবে।
১১. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য স্পেশাল বিসিএসে প্যানেল সিস্টেম: শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে স্পেশাল বিসিএসে প্যানেল সিস্টেম সংযুক্ত করার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।
১২. ভাইভা বোর্ডভিত্তিক নম্বরের তারতম্য কমানো: ভাইভা বোর্ডভিত্তিক নম্বরের তারতম্য কমিয়ে ক্যাটাগরি নির্ধারণ করার প্রস্তাব।
১৩. প্রিলিমিনারি থেকে লিখিত পরীক্ষার মধ্যবর্তী সময় বৃদ্ধি: প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পর থেকে লিখিত পরীক্ষার মধ্যবর্তী সময় অন্তত দুই মাস বা ৫০ দিন রাখা এবং লিখিত পরীক্ষার রুটিন আগে থেকেই প্রকাশ করা।
১৪. চূড়ান্ত রেজাল্টের আগে ক্রসচেক: চূড়ান্ত রেজাল্ট প্রকাশের আগে পরীক্ষা ফলাফল ক্রসচেক করে নিশ্চিত করতে হবে যাতে কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী সম বা নিচের ক্যাডার না পাওয়া যায়।
এনসিপি’র এই প্রস্তাবনা বিসিএস পরীক্ষার মান এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে বিসিএস পরীক্ষার প্রতিটি স্তরের নম্বর প্রকাশ, ভাইভা বোর্ডভিত্তিক তারতম্য হ্রাস, এবং পুলিশ ভ্যারিফিকেশন জটিলতা কমানোর মতো প্রস্তাবগুলো পরীক্ষার প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ এবং নির্ভরযোগ্য করতে সহায়ক হতে পারে।
এনসিপির এই প্রস্তাবনাগুলোর বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের প্রক্রিয়া আরও উন্নত এবং আধুনিক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।