সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় আত্মসাতের পরিমাণ ধরা হয়েছে ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকার বেশি।
চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গার গুপ্তখাল এলাকায় অবস্থিত এসএওসিএল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে মামলাটি রেকর্ড করা হয়। সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে এজাহার দাখিল করেন। দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানের তিন কর্মকর্তা—ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. মোশারফ হোসেন, ব্যবস্থাপক (হিসাব ও নিরীক্ষা) বেলায়েত হোসেন এবং উপব্যবস্থাপক (হিসাব ও নিরীক্ষা) আতিকুর রহমানকে।
দুদকের মামলার এজাহার অনুযায়ী, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা, অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে কোম্পানির বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, কোম্পানির তৎকালীন পরিচালক মঈন উদ্দিন আহমেদের মালিকানাধীন আরেক প্রতিষ্ঠান—এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এওসিএল)—কাছে এসএওসিএলের পাওনা ছিল ১১৯ কোটি ২৪ লাখ ৮৭ হাজার ৮৪৯ টাকা।
তবে ওই পাওনা অর্থ ব্যাংকে জমা না দিয়ে হিসাব বইয়ে জমা দেখানো হয়। সংশ্লিষ্ট চেকগুলো ব্যাংকে জমা না দিয়েই আদায় দেখানো হয় এবং পরে ‘চেক প্রত্যাখ্যাত’ হিসেবে ফেরত দেওয়া হয়। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত পাওনা অনাদায়ী থেকে যায় এবং কোম্পানির আর্থিক ক্ষতি ঘটে।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিচালক মঈন উদ্দিন আহমেদ নিজে এসএওসিএলের পরিচালক থাকা অবস্থায় নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এওসিএলের সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন করেছেন। এটি কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর ধারা ১০৫ অনুযায়ী অনৈতিক ও অবৈধ কার্যক্রমের মধ্যে পড়ে। তবে তিনি চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করায় তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আসামি তিন কর্মকর্তা প্রতারণামূলকভাবে বিল ও ভাউচার প্রস্তুত করে তাতে স্বাক্ষর দিয়েছেন এবং কোম্পানির প্রকৃত আয় গোপন রেখে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। পরবর্তীতে এই অর্থ অন্যত্র স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানিলন্ডারিংয়ের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট আর্থিক লেনদেনের নথি, ব্যাংক হিসাব এবং অভ্যন্তরীণ আর্থিক প্রতিবেদন যাচাই করা হয়েছে। তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মেলায় কমিশন মামলাটি রেকর্ড করে।
দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মামলার পরবর্তী ধাপে আসামিদের বিরুদ্ধে বিস্তারিত অনুসন্ধান পরিচালনা করা হবে এবং প্রয়োজনে সম্পৃক্ত অন্যান্য ব্যক্তিদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। এ ছাড়া আত্মসাৎ করা অর্থ পুনরুদ্ধারের উদ্যোগও নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এই মামলাকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সরকারি মালিকানাধীন জ্বালানি খাতে দুর্নীতির এমন ঘটনা ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশাসনিক তদারকি ও নিরীক্ষা কার্যক্রম আরও জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের মন্তব্য।