আইন ও আদালত ডেস্ক
অর্থ আত্মসাতের একাধিক মামলায় গ্রেফতার বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশার বাহারকে মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকালে আদালতের এজলাসে আনার পথে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ হস্তক্ষেপ করে তাকে নিরাপদে আদালতের ভেতরে নিয়ে যায়। এ সময় এক ব্যক্তিকে আটক করা হলেও পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ঘটনাটি ঘটে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নতুন ভবনের তৃতীয় তলায়। আদালত সূত্রে জানা যায়, শতাধিক মামলায় গ্রেফতার খায়রুল বাশার জামিন আবেদন শুনানির জন্য আদালতে হাজির হন। তাকে আনতে পুলিশ আদালত প্রাঙ্গণে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলে। নিরাপত্তাজনিত কারণে তাকে মূল প্রবেশপথ ব্যবহার না করে বিকল্প পথে এজলাসে তোলা হয়।
তবে ঠিক এজলাসের দরজার সামনে পৌঁছানোর সময় কয়েকজন অভিযোগকারী আকস্মিকভাবে তার ওপর হামলা চালান। উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং খায়রুল বাশারকে এজলাসের ভেতরে প্রবেশ করান। পরবর্তীতে আদালতের কার্যক্রম শেষে তাকে আবার হাজতখানায় নেওয়া হয়।
খায়রুল বাশার তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ৯৯টি মামলায় জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জিয়াদুর রহমান চেক জালিয়াতি সংক্রান্ত ১৪টি মামলায় জামিন মঞ্জুর করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী পারভেজ আহমেদ।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক জানান, খায়রুল বাশারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০টি মামলা দায়ের হয়েছে, যেখানে তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থী তাদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনেছেন। অভিযোগকারীদের দাবি, শিক্ষার্থীদের বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে তিনি প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
মারধরের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ জাহিদুল ইসলাম বলেন, হামলার সময় পুলিশের একজন সদস্য আহত হন। “ঘটনার পরপরই একজনকে আটক করা হয়েছিল, তবে পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়,” বলেন তিনি। তবে আহত পুলিশ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আহত হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক মূলত বিদেশে উচ্চশিক্ষার পরামর্শ ও শিক্ষার্থী পাঠানোর কাজে নিয়োজিত একটি প্রতিষ্ঠান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে বিদেশে পাঠানোর আশ্বাস দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়, কিন্তু পরবর্তীতে প্রতিশ্রুত সেবা প্রদান করা হয়নি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে একাধিক থানায় প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের মামলা চলমান রয়েছে। খায়রুল বাশার বর্তমানে এসব মামলার আসামি হিসেবে কারাগারে আছেন।
ঘটনার পর আদালত প্রাঙ্গণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কর্মকর্তারা জানান, ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আসামিদের আনা-নেওয়ার সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে।