রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় নিহতের পরিবারকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে মেট্রোরেলে সার্বিক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি আসিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন ও অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ। রিটে বলা হয়, মেট্রোরেল ও দেশের সব ফ্লাইওভারে ব্যবহৃত বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান যাচাইয়ে একটি স্বাধীন কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। আদালত এই বিষয়ে প্রাথমিক শুনানি শেষে রুল জারি করেন।
রুলে বিবাদীদের উদ্দেশে জানতে চাওয়া হয়েছে— মেট্রোরেল নির্মাণকাজে ব্যবহৃত বিয়ারিং প্যাডের মাননিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে প্রাণহানি ঘটলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর দায় কেন নির্ধারণ করা হবে না এবং নিহত ব্যক্তির পরিবারকে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।
এর আগে মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারে ব্যবহৃত বিয়ারিং প্যাডের মান নির্ণয়ে নির্দেশনা চেয়ে দুটি পৃথক রিট দায়ের করা হয়। প্রথম রিটে নিরাপত্তা যাচাই ও মান পরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের আবেদন করা হয়, এবং দ্বিতীয় রিটে দুর্ঘটনায় নিহত আবুল কালামের পরিবারের জন্য দুই কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়।
ঘটনাটি ঘটে ২৬ অক্টোবর, রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মেট্রোরেলের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে নিচে পড়ে যানবাহনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আবুল কালাম (৩২) নামে এক যুবকের ওপর পড়ে। তিনি ঘটনাস্থলেই গুরুতর আহত হন এবং পরে মৃত্যুবরণ করেন। নিহত আবুল কালামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঈশরপাটি গ্রামে।
দুর্ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে মেট্রোরেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও নির্মাণমান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের দুর্ঘটনা মেট্রোরেল প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ, মাননিয়ন্ত্রণ এবং তদারকি ব্যবস্থার দুর্বলতার ইঙ্গিত বহন করে।
হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি মেট্রোরেলের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ পর্যায়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ব্যবহৃত বিয়ারিং প্যাডের মান, এবং পূর্ববর্তী তদারকি প্রক্রিয়া মূল্যায়ন করবে। আদালত এই প্রতিবেদন আগামী ৩০ দিনের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে, আদালতের নির্দেশের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আদালতের এই নির্দেশনা মেট্রোরেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি সরকারি তদারকি জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।