অর্থনীতি ডেস্ক
ভারতের আদানি পাওয়ার লিমিটেড বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের হুমকি দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, যদি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ১০ নভেম্বরের মধ্যে তাদের বকেয়া পরিশোধ না করে, তাহলে ১১ নভেম্বর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হবে।
৩১ অক্টোবর আদানি পাওয়ার লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান অবিনাশ অনুরাগ বিপিডিবির চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ হুঁশিয়ারি দেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, বিপিডিবি এখনো ৪৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বকেয়া পরিশোধ করেনি। এর মধ্যে ২৬২ মিলিয়ন ডলার হলো বিপিডিবির স্বীকৃত অপরিশোধিত বিল।
চিঠিতে বলা হয়, একাধিকবার যোগাযোগ ও স্মারকলিপি পাঠানো সত্ত্বেও বিপিডিবি পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। সর্বশেষ ২৭ অক্টোবর পাঠানো চিঠিতেও বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আদানি পাওয়ার জানায়, ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর স্বাক্ষরিত পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্টের (পিপিএ) ১৩.২(i)(i) ও (ii) ধারার অধীনে তারা এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার অধিকার রাখে।
প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহ বন্ধ থাকলেও তারা ‘ডিপেন্ডেবল ক্যাপাসিটি’র ভিত্তিতে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট পাওয়ার অধিকার রাখবে। অর্থাৎ, সরবরাহ বন্ধ থাকলেও নির্ধারিত সক্ষমতা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দাবি করার বিধান রয়েছে।
এর আগে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ৪৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বকেয়া পরিশোধের অনুরোধ জানান। তিনি জানান, জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ আংশিক অর্থ পরিশোধ করলেও একটি বড় অংশ এখনো বকেয়া রয়েছে।
চিঠিতে গৌতম আদানি উল্লেখ করেন, ২০২৫ সালের ২৩ জুন অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিপিডিবির কর্মকর্তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব বকেয়া ও লেট পেমেন্ট সারচার্জ (এলপিএস) পরিশোধ করা হবে। কিন্তু এখনো কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি দেওয়া হয়নি।
তিনি প্রধান উপদেষ্টার কাছে আহ্বান জানান, অবিলম্বে পাওনা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে, যাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ও অর্থায়ন প্রক্রিয়ায় বাড়তি চাপ সৃষ্টি না হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিপিডিবি বর্তমানে সরকার গঠিত ন্যাশনাল রিভিউ কমিটি অন পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্টস (পিপিএ)-এর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে। এ কমিটির দায়িত্ব হলো বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিগুলোর নীতি, প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছতা পুনর্মূল্যায়ন করা।
কমিটির প্রধান বিচারপতি মইনুল ইসলাম ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ‘বেসিক গভর্ন্যান্স ফেইলিউর অ্যান্ড রিভিউ অব অ্যানোমালিজ ইন দ্য অ্যাপ্রুভাল প্রসেস অন আদানি’ শিরোনামে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রক্রিয়া, চুক্তি অনুমোদন পদ্ধতি এবং সরকারি তদারকির ঘাটতি সম্পর্কিত বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
সূত্র জানায়, কমিটি আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রমও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন আগামী জানুয়ারিতে প্রকাশের কথা রয়েছে, যেখানে বিদ্যুৎ ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের বিষয়ে সুপারিশ করা হবে।
এই পরিস্থিতিতে আদানি পাওয়ারের হুঁশিয়ারি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে চাপ বাড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, বিশেষ করে চলমান আর্থিক সংকট ও জ্বালানি আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে। তবে বিপিডিবি বা বিদ্যুৎ বিভাগ এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।